• Latest post

    সালাতে তাড়াহুড়া না করা, ধীরে সালাত আদায় করতে হবে,

    ক্বিরাআত, রুকূ-সিজদা ও ছালাতের অন্যান্য আহকাম খুব তাড়াহুড়া করে আদায় করা :

    ছালাতে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা ছালাত বিশুদ্ধ হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত। বর্তমান সমাজে যে ছালাত চালু আছে, তাতে একাগ্রতা মোটেও নেই। কোন মুছল্লীর মাঝে ধীরস্থিরতার অনুভূতি ও একাগ্রতার মানসিকতা থাকলেও ইমামদের কারণে তা অর্জন করতে পারে না। অধিকাংশ ইমাম ছালাতে দাঁড়িয়ে এমন তাড়াহুড়া শুরু করেন মনে হয় তার শরীরে কেউ আগুন ধরিয়ে দিল কিংবা টগবগে গরম তেলের মধ্যে তাকে চুবানো হল; ছালাত শেষ করেই তিনি ঠান্ডা পানিতে ঝাঁপ দিবেন। এই তাড়াহুড়ার শুরুটা হয় ইক্বামতের সময় থেকেই। কারণ মুয়াযযিন ইক্বামত শেষ না করতেই ইমাম ‘তাকবীরে তাহরীমা’ বলে ফেলেন। আর শেষ হয় অতি সংক্ষেপে কয়েক সেকেন্ড মুনাজাত করে দ্রুত উঠে যাওয়ার মাধ্যমে। দুঃখজনক হল, এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস কোন মুছল্লীর হয় না। ইমামের প্রতি ভক্তি আর চলমান রীতি তাদেরকে বন্ধ্যা করে দিয়েছে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, রাজা-প্রজা, মনীব-চাকর সব এক রকম হয়ে গেছে। তাদের আসল-নকল বুঝার বোধ নষ্ট হয়ে গেছে। নিম্নের হাদীছগুলো লক্ষণীয়-

    عَنْ أَبِىْ قَتَادَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  أَسْوَأُ النَّاسِ سَرِقَةً الَّذِىْ يَسْرِقُ مِنْ صَلَاتِهِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَكَيْفَ يَسْرِقُ مِنْ صَلَاتِهِ؟ قَالَ لَا يَتِمُّ رُكُوْعَهَا وَلَا سُجُوْدَهَا.

    আবু ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় চোর ঐ ব্যক্তি, যে তার ছালাত চুরি করে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সে কিভাবে ছালাতে চুরি করে? তিনি বললেন, সে ছালাতে রুকূ এবং সিজদা পূর্ণ করে না। [1]

    عَنْ طَلْقِ بْنِ عَلىٍّ الْحَنَفِيّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  لَا يَنْظُرُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى صَلَاةِ عَبْدٍ لَا يُقِيْمُ فِيهَا صُلْبَهُ بَيْنَ رُكُوْعِهَا وَسُجُوْدِهَا.

    ত্বালক ইবনু আলী আল-হানাফী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ঐ বান্দার ছালাতের প্রতি দৃষ্টি দেন না, যে ছালাতে রুকূ ও সিজদায় পিঠ সোজা করে না।[2]

    عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ إنَّ الرَّجُلَ لَيُصَلِّي سِتِّيْنَ سَنَةً مَا تُقْبَلُ لَهُ صَلاَةٌ لَعَلَّهُ يُتِمُّ الرُّكُوْعَ وَلاَ يُتِمُّ السُّجُوْدَ وَيُتِمُّ السُّجُوْدَ وَلاَ يُتِمُّ الرُّكُوْعَ.

    আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নিশ্চয় কোন মুছল্লী ৬০ বছর যাবৎ ছালাত আদায় করছে। কিন্তু তার ছালাত কবুল হচ্ছে না। হয়ত সে পূর্ণভাবে রুকূ করে কিন্তু সিজদা পূর্ণভাবে করে না। অথবা পূর্ণভাবে সিজদা করে কিন্তু পূর্ণভাবে রুকূ করে না।[3] উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে রুকূ ও সিজদা উভয়ই যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।

    عَنْ أَبِىْ مَسْعُوْدِ الْأَنْصَارِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  لَا تُجْزِئُ صَلَاةُ الرَّجُلِ حَتَّى يُقِيْمَ ظَهْرَهُ فِي الرُّكُوْعِ وَالسُّجُوْدِ.

    আবু মাসঊদ আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মুছল্লীর ছালাত ততক্ষণ যথেষ্ট হবে না, যতক্ষণ সে রুকূ ও সিজদায় তার পিঠ সোজা না করবে।[4]

    عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَدَخَلَ رَجُلٌ فَصَلَّى فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِىِّ  فَرَدَّ وَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ فَرَجَعَ يُصَلِّى كَمَا صَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِىِّ  فَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ ثَلاَثًا فَقَالَ وَالَّذِىْ بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا أُحْسِنُ غَيْرَهُ فَعَلِّمْنِى فَقَالَ إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ فَكَبِّرْ ثُمَّ اقْرَأْ مَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَعْتَدِلَ قَائِمًا ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا وَافْعَلْ ذَلِكَ فِىْ صَلاَتِكَ كُلِّهَا.

    আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে ছালাত আদায় শেষে রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম  দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, তুমি পুনরায় ছালাত আদায় কর। কেননা তুমি ছালাত আদায় করনি। এইভাবে লোকটি তিনবার ছালাত আদায় করল। রাসূল (ছাঃ) তাকে তিনবারই ফিরিয়ে দিলেন। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, এর চাইতে সুন্দরভাবে আমি ছালাত আদায় করতে জানি না। অতএব আমাকে ছালাত শিখিয়ে দিন! অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, যখন তুমি ছালাতে দাঁড়াবে তখন তাকবীর দিবে। অতঃপর কুরআন থেকে যা পাঠ করা তোমার কাছে সহজ মনে হবে, তা পাঠ করবে। তারপর প্রশান্তিসহ রুকূ করবে। অতঃপর দাঁড়িয়ে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করবে। তারপর প্রশান্তির সাথে সিজদা করবে। অতঃপর মাথা উঠিয়ে প্রশান্তিসহ বসবে। প্রত্যেক ছালাতে এভাবে করবে।[5]

    [1]. মুসনাদে আহমাদ হা/২২৬৯৫; মিশকাত হা/৮৮৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮২৫, ২/২৯৫ পৃঃ। [2]. আহমাদ হা/১৬৩২৬; মিশকাত হা/৯০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৪৪, ২/৩০২ পৃঃ। [3]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৯৬৩; ছহীহ তারগীব হা/৫২৯, সনদ হাসান। [4]. আবুদাঊদ হা/৮৫৫, ১/১২৪ পৃঃ; মিশকাত হা/৮৭৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮১৮, ২/২৯২ পৃঃ; ত্বাবারাণী কাবীর হা/৩৭৪৮; ছহীহ তারগীব হা/৫২৮। [5]. ছহীহ বুখারী হা/৭৫৭; মিশকাত হা/৭৯০ ও ৮০৪, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ।