• Latest post

    জুমুআর সালাতের আযান দেয়ার পদ্ধতি, জুমআর সালাতে কয়বার আযান দিতে হবে ,

    জুম‘আর ছালাতের জন্য দুই আযান দেওয়া :

    জুম‘আর ছালাতের জন্য দুই আযান দেওয়ার যে প্রথা সমাজে চালু আছে তা সুন্নাত সম্মত নয়। জুম‘আর আযান হবে একটি। ইমাম খুৎবা দেওয়ার জন্য যখন মিম্বরে বসবেন, তখন মুয়াযযিন আযান দিবে।[1] রাসূল (ছাঃ), আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর আমলে এবং ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফতের প্রথমাংশে জুম‘আর আযান একটিই ছিল। অতঃপর মানুষের সংখ্যা যখন বেড়ে গেল, তখন ওছমান (রাঃ) মসজিদে নববীর অনতিদূরে ‘যাওরা’ নামক বাজারে জুম‘আর পূর্বে আরেকটি আযান চালু করেন।[2]

    ওছমান (রাঃ) যে কারণে আরেকটি আযান চালু করেছিলেন, কোথাও উক্ত কারণ বিদ্যমান থাকলে তা এখনো চালু করা জায়েয। কারণ খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুন্নাতের অনুসরণে ওছমান (রাঃ)-এর আযান যদি সকল মসজিদের জন্য পালনীয় হত, তাহলে তিনি মক্কায় চালু করলেন না কেন? অনুরূপ অন্যান্য মসজিদে চালু হল না কেন? আলী (রাঃ)-এর আমল পর্যন্ত অন্য কোথাও উক্ত আযান চালু হয়নি। এমনকি মক্কাতেও চালু হয়নি। বর্তমানে আমরা কি উক্ত আযান চালু করে ছাহাবীদের চেয়ে বেশী দ্বীনদারীর ভাব দেখাতে চাই? এ জন্যই হয়ত ইবনু ওমর (রাঃ) উক্ত আযানকে বিদ‘আত বলেছেন।[3] অনুরূপ ইমাম কুরতুবী (মৃঃ ৬৭১) ইমামের সামনে মিম্বরের নিকটে দেয়া প্রচলিত আযানকে বিদ‘আত বলেছেন।[4]

    ওমর ইবনু আলী আল-ফাকেহানী (৬৫৪-৭৩৪/১২৫৬-১৩৩৪ খৃঃ) বলেন, ডাক আযান প্রথম বছরায় চালু করেন যিয়াদ এবং মক্কায় চালু করেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। আর আমার কাছে এখন খবর পৌঁছেছে যে, নিকট মাগরিবে অর্থাৎ আফ্রিকার তিউনিস ও আলজেরিয়ার পূর্বাঞ্চলের লোকদের নিকট কোন আযান নেই, মূল এক আযান ব্যতীত’।[5] আলী (রাঃ)-এর (৩৫-৪০ হিঃ) রাজধানী কূফাতেও এই আযান চালু ছিল না।[6] ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, উমাইয়া খলীফা হেশাম বিন আব্দুল মালেক (১০৫-২৫/৭২৪-৭৪৩ খৃঃ) সর্বপ্রথম ওছমানী আযানকে ‘যাওরা’ বাজার থেকে এনে মদ্বীনার মসজিদে চালু করেন।[7] ইবনুল হাজ্জ মালেকী বলেন, অতঃপর হেশাম খুৎবাকালীন মূল আযানকে মসজিদের মিনার থেকে নামিয়ে ইমামের সম্মুখে নিয়ে আসেন’।[8] এভাবে হাজ্জাজী ও হেশামী আযান সর্বত্র চালু হয়েছে।[9] অতএব বর্তমানে যে আযান চলছে সেটা রাসূল (ছাঃ)-এর আযানও নয়, ওছমান (রাঃ)-এর আযানও নয়। সুতরাং উক্ত বিদ‘আতী আযান অবশ্যই পরিত্যাজ্য। রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে যে আযান চালু ছিল আমাদের সবাইকে সেই আযানে ফিরে যেতে হবে।

    জ্ঞাতব্য : হেদায়ার লেখক উক্ত বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বিদ‘আতী আযানের পক্ষে অবস্থান করে বলেছেন,

    (وَإِذَا صَعِدَ الْإِمَامُ الْمِنْبَرَ جَلَسَ وَأَذَّنَ الْمُؤَذِّنُوْنَ بَيْنَ يَدِي الْمِنْبَرِ ) بِذَلِكَ جَرَى التَّوَارُثُ وَلَمْ يَكُنْ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ  إلَّا هَذَا الْأَذَانُ.

    ‘যখন ইমাম মিম্বরে উঠে বসবেন তখন মুয়াযযিন মিম্বরের সামনে আযান দিবে। আর এই আযানই ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। আর এই আযান ছাড়া রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে অন্য কোন আযান চালু ছিল না।[10]

    সুধী পাঠক! লেখক মসজিদের ভিতরের আযানের সমাধান দিয়েছেন, কিন্তু পূর্বের ডাক আযানের বিষয়টি উল্লেখ করেননি। তাহলে জুম‘আর ছালাতের আধা ঘণ্টা পূর্বে যে আযান দেয়ার প্রচলন হয়েছে তার ভিত্তি কি? লেখক রাসূল (ছাঃ), আবুবকর, ওমর (রাঃ)-এর সুন্নাতী আযানকে উল্লেখ করতে ভুলে গেছেন কিন্তু ভিত্তিহীন বিদ‘আতী আযান উল্লেখ করতে ভুলেননি।[11] এটা যে মাযহাবী ফাঁদ, এখান থেকে তিনি মুক্ত হবেন কিভাবে? অতএব আমাদেরকে রাসূল (ছাঃ)-এর আযানই আকড়ে ধরে থাকতে হবে। অন্যগুলো সব প্রত্যাখ্যান করতে হবে।

    [1]. বুখারী হা/৯১৫ ও ৯১৬, ১/১২৫ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৬৯ ও ৮৭০, ২/১৮৩ পৃঃ)। [2]. বুখারী হা/৯১২, ১/১২৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৬৬, ২/১৮১ পৃঃ); মিশকাত হা/১৪০৪, পৃঃ ১২৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৩২০, ৩/১৯৬ পৃঃ। [3]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৫৪৭৭-৫৪৮৩; আলবানী, আল-আজবেবাতুন নাফে‘আহ, পৃঃ ৪। [4]. তাফসীরে কুরতুবী ১৮/১০১ পৃঃ, সূরা জুমু‘আ ৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ। [5]. মির‘আতুল মাফাতীহ ৪/৪৯২। [6]. তাফসীরে জালালাইন, ৪৬০ পৃঃ, টীকা ১৯; কুরতুবী ১৮/১০০ পৃঃ, তাফসীর সূরা জুম‘আ-৯। [7]. মির‘ক্বাতুল মাফাতীহ (দিল্লী ছাপা : তাবি) ৩/২৬৩। [8]. আওনুল মা‘বূদ শরহ আবুদাঊদ (কায়রো : ১৪০৭/১৯৮৭) ৩/৪৩৩-৩৪ পৃঃ, হা/১০৭৪-৭৫-এর ব্যাখ্যা। [9]. আওনুল মা‘বূদ ৩/৪৩৭-৩৮। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ১৯৪ ও ১৯৫। [10]. হেদায়া ১ম খন্ড, পৃঃ ১৭১-১৭২। [11]. আলবানী, আল-আজবেবাতুন নাফে‘আহ, ৯৭, নং ৩০।