• Latest post

    আল্লাহকে ভালবাসার উপকার,


    আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ال عمران: ٣١] 

    অর্থাৎ “বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। বস্তুত আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত)


    তিনি আরো বলেন,

    ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَن يَرۡتَدَّ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَسَوۡفَ يَأۡتِي ٱللَّهُ بِقَوۡمٖ يُحِبُّهُمۡ وَيُحِبُّونَهُۥٓ أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ يُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوۡمَةَ لَآئِمٖۚ ذَٰلِكَ فَضۡلُ ٱللَّهِ يُؤۡتِيهِ مَن يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ ٥٤ ﴾ [المائ‍دة: ٥٤] 


    অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ তার দ্বীন থেকে ফিরে গেলে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনয়ন করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন ও যারা তাঁকে ভালবাসবে, তারা হবে মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দায় ভয় করবে না, এ আল্লাহর অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন। বস্তুত আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা মায়েদাহ ৫৪ আয়াত)


    আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার কোনো বন্ধুর সাথে শত্রুতা করবে, তার বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধের ঘোষণা রইল। আমার বান্দা যে সমস্ত জিনিস দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম জিনিস হল তা, যা আমি তার উপর ফরয করেছি। (অর্থাৎ ফরযের দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করা আমার নিকটে বেশী পছন্দনীয়।) আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসতে শুরু করি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার ঐ কান হয়ে যাই, যার দ্বারা সে শোনে, তার ঐ চোখ হয়ে যাই, যার দ্বারা সে দেখে, তার ঐ হাত হয়ে যাই, যার দ্বারা সে ধরে এবং তার ঐ পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে। আর সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি তাকে দেই এবং সে যদি আমার আশ্রয় চায়, তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দেই।’’(বুখারী) [1]

    (‘কান হয়ে যাই, যার দ্বারা সে শোনে, তার ঐ চোখ হয়ে যাই, যার দ্বারা সে দেখে, তার ঐ হাত হয়ে যাই, যার দ্বারা সে ধরে এবং তার ঐ পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে।’ অর্থাৎ আমার সন্তুষ্টি মোতাবেক সে শোনে, দেখে, ধরে ও চলে।)

    [1] সহীহুল বুখারী ৬৫০২ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

    আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি জিবরীলকে ডেকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুককে ভালবাসেন, অতএব তুমিও তাকে ভালবাস।’ সুতরাং জিবরীলও তাকে ভালবাসতে শুরু করেন। অতঃপর তিনি আকাশবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, ‘আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন। কাজেই তোমরাও তাকে ভালবাসো।’ তখন আকাশবাসীরা তাকে ভালবাসতে শুরু করে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে গ্রহণযোগ্য করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [1]

    মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি জিবরীলকে ডেকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি অমুককে ভালবাসি, অতএব তুমিও তাকে ভালবাস।’ তখন জিবরীলও তাকে ভালবাসতে শুরু করেন। অতঃপর তিনি আকাশবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, ‘আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন। কাজেই তোমরাও তাকে ভালবাসো।’ তখন আকাশবাসীরা তাকে ভালবাসতে শুরু করে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে গ্রহণযোগ্য করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

    আর আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন বান্দাকে ঘৃণা করেন, তখন তিনি জিবরীলকে ডেকে বলেন, ‘আমি অমুককে ঘৃণা করি, অতএব তুমিও তাকে ঘৃণা কর।’ তখন জিবরীল তাকে ঘৃণা করতে শুরু করেন। অতঃপর তিনি আকাশবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, ‘আল্লাহ অমুক বান্দাকে ঘৃণা করেন। কাজেই তোমরাও তাকে ঘৃণা কর।’ তখন আকাশবাসীরাও তাকে ঘৃণা করতে শুরু করে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে ঘৃণ্য করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’

    [1] সহীহুল বুখারী ৩২০৯, ৬০৪০, ৭৪৮৫, মুসলিম ২৬৩৭, তিরমিযী ৩১৬১, আহমাদ ৭৫৭০, ৮২৯৫, ৯০৮৮, ১০২৩৭, ১০২৯৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৮ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)


     আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মহান প্রভু হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যখন বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, তখন আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যখন সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় তখন আমি তার দিকে দু’হাত অগ্রসর হই। আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে তখন আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’’[1]

    [1] সহীহুল বুখারী ৭৫৩৬, ৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫২৭, মুসলিম ২৬৭৫, তিরমিযী ২৩৮৮, ৩৬০৩, ইবনু মাজাহ ৩৮২২, আহমাদ ৭৩৭৪, ২৭৪০৯, ৮৪৩৬ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

     আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
    থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল
    সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
    বলেছেন, ‘‘যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার
    মঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে
    তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে (পাপের)
    শাস্তি দিয়ে দেন। আর যখন আল্লাহ
    তাঁর বান্দার অমঙ্গল চান, তখন তিনি
    তাকে (শাস্তিদানে) বিরত থাকেন।
    পরিশেষে কিয়ামতের দিন তাকে
    পুরোপুরি শাস্তি দেবেন।’’ নবী
    সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
    আরো বলেন, ‘‘বড় পরীক্ষার বড় প্রতিদান
    রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো
    জাতিকে ভালবাসেন, তখন তার
    পরীক্ষা নেন। ফলে তাতে যে সন্তুষ্ট
    (ধৈর্য) প্রকাশ করবে, তার জন্য (আল্লাহর)
    সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে (আল্লাহর
    পরীক্ষায়) অসন্তুষ্ট হবে, তার জন্য
    রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’’[1]
    মুসলিম -2396. ইবনু মাযাহ-403
    আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
    থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল
    সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
    বলেছেন, ‘‘আল্লাহ যার মঙ্গল চান,
    তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।’’[1]
    [1] সহীহুল বুখারী ৫৬৪৫, আহমাদ ৭১৯৪,
    মুওয়াত্তা মালেক ১৭৫২


    আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, (দেহমনে) সবল মু’মিন আল্লাহর নিকট দুর্বল মু’মিন অপেক্ষা বেশী প্রিয়। আর প্রত্যেকের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। তুমি ঐ জিনিসে যত্নবান হও, যাতে তোমার উপকার আছেঃ এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর ও উৎসাহহীন হয়ো না। যদি তোমার কিছু ক্ষতি হয়, তাহলে এ কথা বলো না যে, ‘যদি আমি এ রকম করতাম, তাহলে এ রকম হত।’ বরং বলো, ‘আল্লাহর (লিখিত) ভাগ্য এবং তিনি যা চেয়েছেন তাই করেছেন।’ কারণ, ‘যদি’ (শব্দ) শয়তানের কাজের দুয়ার খুলে দেয়।[1]

    [1] সহীহুল বুখারী ২৬৬৪, ইবনু মাজাহ ৭৯, ৪১৬৮, আহমাদ ৮৫৭৩, ৮৬১১ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)


     আবূ হুরাইরা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি।’ তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পার; যার অর্থ, ‘‘কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কি পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে।’’ (সূরা সাজদাহ ১৭ আয়াত, বুখারী-মুসলিম][1]

    [1] সহীহুল বুখারী ৩২৪৪, ৪৭৭৯, ৪৭৮০, ৪৭৯৮, মুসলিম ২৮২৮৪, তিরমিযী ৩১৯৭, ইবনু মাজাহ ৪৩২৮, আহমাদ ২৭৩৬০, ৮৬০৯, ৯০২৬, ৯১২৫, ৯৩৬৫, ৯৬৪১, ৯৬৮৮, ১০০৫১, ১০১৯৯, দারেমী ২৮২৮ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)


     আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জাহান্নামকে মনোলোভা জিনিসসমূহ দ্বারা ঘিরে দেওয়া হয়েছে এবং জান্নাতকে ঘিরে দেওয়া হয়েছে কষ্টসাধ্য কর্মসমূহ দ্বারা।’’[1]

    ‘ঘিরে দেওয়া হয়েছে’ অর্থাৎ ঐ জিনিস বা কর্ম জাহান্নাম বা জান্নাতের মাঝে পর্দাস্বরূপ, যখনই কেউ তা করবে, তখনই সে পর্দা ছিঁড়ে তাতে প্রবেশ করবে।

    [1] সহীহুল বুখারী ৬৪৮৭, তিরমিযী ২৫৬০, নাসায়ী ৩৭৬৩, আবূ দাউদ ৪৭৪৪, আহমাদ ৭৪৭৭, ২৭৫১২, ৮৬৪৪, ৮৭২১ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)