• Latest post

    বদলি হজ্বের মাসায়েল, বদলি হজ্বের কিছু মাসায়েল


     বদলি হজ্ব ও হজ্বের ফজিলতঃ


    বদলি হজ্ব বুঝার আগে আমরা একটা ছোট্ট উদাহরণ দিতে পারি সহজেই বুঝার জন্য৷যেমন ধরুনঃআমরা যখন ছোট ছিলাম তখন কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারি নি সব কাজ বাবা মা বা প্রতিবেশী আত্বীয় স্বজনেরা করেছ ৷
    কিন্তু যখন বড় হলাম তখন নিজের কাজ নিজেই করতে পারছি কারো সাহায্য লাগছেনা৷

    এটা যেমন ছিল পরনির্ভরশীল ঠিক হজ্বের বিষয়টি এরকমই যখন ভ্রমণ করতে বা অসুস্থ তখন কিন্তু আমরা হজ্ব সম্পন্ন করতে পারব না তাই কারো মাধ্যেমে করে নিতে হয় এরই নাম হল বদলি হজ্ব৷আরো নিচে দেও

    যদি কোনো ব্যক্তি ফরজ হজ্জ আদায় করতে অক্ষম হয় তাহলে তার পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে অন্য কোনো ব্যক্তির হজ্জ পালনকে বদলি হজ্জ বলে। কয়েকটি হাদিস থেকে বদলি হজ্জের বিধান পাওয়া যায়। নীচে হাদিসগুলো উল্লেখ করা হল।

    ১.খাছআম গোত্রের জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)আল্লাহ তার বান্দাদের ওপর যে ফরজ আরোপ করেছেন তা আমার পিতাকে খুব বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়েছে। তিনি বাহনের ওপর স্থির হয়ে বসতে পারেন না। তবে কি আমি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করে দেব? তিনি বললেন, হাঁ। ঘটনাটি ছিল বিদায় হজ্জের সময়কার।[1]

    ২. আবু রাযিন আল আকিলি থেকে বর্ণিত। তিনি এসে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করে বললেন, আমার পিতা খুব বৃদ্ধ, তিনি হজ্জ ও উমরা পালন করতে পারেন না। সওয়ারির ওপর উঠে চলতেও পারেন না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বললেন, তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরা করো।[2]

    ৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন,  لَبَّيْكَ عَنْ شُبْرَمَةَ- শুবরামার পক্ষ থেকে লাববাইক। তিনি বললেন, শুবরামা কে? লোকটি বললেন, আমার ভাই বা আত্মীয়। তিনি বললেন, তুমি কি নিজের হজ্জ করেছ? লোকটি বললেন, না। তিনি বললেন, আগে নিজের হজ্জ করো। তারপর শুবরামার হজ্জ।[3]

    তিন প্রকার হজ্জের মধ্যে বদলি হজ্জ কোন প্রকার হবে তা, যে ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ করা হচ্ছে (المحجوج عنه) তিনি নির্ধারণ করে দেবেন। যদি ইফরাদ করতে বলেন তাহলে ইফরাদ করতে হবে, যদি কেরান করতে বলেন তাহলে কেরান করতে হবে, আর যদি তামাত্তু করতে বলেন তাহলে তামাত্তু করতে হবে। এর অন্যথা হলে হবে না। বদলি-হজ্জ, ইফরাদ হজ্জ হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। বরং ওপরে উল্লেখিত দ্বিতীয় হাদিসে হজ্জ ও উমরা উভয়টার কথাই আছে। এতে, বদলি হজ্জকারী তামাত্তু হজ্জ করতে পারবে, এর দিকে ইশারা রয়েছে।

    বদলি হজ্জকারী ইফরাদ ভিন্ন অন্য কোনো হজ্জ করলে তার হজ্জ হবে না, হাদিসে এমন কোনো বাধ্য-বাধকতা খোঁজে পাওয়া যায় না। ‘হজ্জ’ শব্দ উচ্চারণ করলে শুধুই ইফরাদ বোঝাবে, এর পেছনেও কোনো শক্ত প্রমাণ নেই। কেননা হজ্জের সাথে উমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে গিয়েছে বলে এক হাদিসে এসেছে। دَخَلَتِ اْلُعمْرَةُ ِفْي اْلحَجِّ (হজে উমরা প্রবিষ্ট হয়েছে)[4] তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ)খাছয়াম গোত্রের মহিলাকে তাঁর পিতার বদলি-হজ্জ করার অনুমতি দেয়ার সময় যে বলেছেন, فَحُجِّيْ عَنْهُ তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ করো’, এর দ্বারা তিনি উমরাবিহীন হজ্জ বুঝিয়েছেন, এ কথার পেছনে আদৌ কোনো যুক্তি নেই।

    বদলি-হজ্জ কেবলই ইফরাদ হজ্জ হতে হবে, ফেকাহশাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবেও এ কথা লেখা নেই। ফেকাহশাস্ত্রের কিতাবে যা লেখা আছে, তা হল, বদলি-হজ্জ যার পক্ষ থেকে করা হচ্ছে তিনি যে ধরনের নির্দেশ দেবেন সে ধরনের হজ্জই করতে হবে। এখানে আমি প্রসিদ্ধ কিতাব বাদায়েউস্সানায়ের (بدائع الصنائع) কিছু এবারত তুলে দিচ্ছি—

     إذا أمر بحجة مفردة أو بعمرة مفردة، فقرن فهو مخالف ضامن في قول أبي حنيفة، وقال أبو يوسف ومحمد يجزي ذلك عن الآمر، نستحسن وندع القياس فيه --- ولو أمره أن يحج عنه، فاعتمر ضمن، لأنه خالف، ولو اعتمر، ثم حج من مكة، يضمن النفقة في قولهم جميعا، لأمره له بالحج بسفر، وقد أتى بالحج من غير سفر، لأنه صرف سفره الأول إلى العمرة، فكان مخالفا، فيضمن النفقة —

    ولو أمره بالحج عنه بجمع بين إحرام الحج والعمرة، فأحرم بالحج عنه وأحرم بالعمرة عن نفسه، فحج عنه ،واعتمر عن نفسه، صار مخالفا في ظاهر الرواية عن أبي حنيفة.

    অর্থাৎ, (যিনি বদলি-হজ্জ করাচ্ছেন) তিনি যদি শুধু হজ্জ করার নির্দেশ দেন অথবা শুধু ওমরা করার নির্দেশ দেন, আর বদলি-হজ্জকারী কেরান হজ্জ করল তবে বদলি-হজ্জকারীকে—ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর কথা অনুসারে—ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ (র.) এর নিকট, নির্দেশকারীর পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে। এটাকে বরং এস্তেহসান মনে করি ও এ ব্যাপারে কিয়াস ছেড়ে দিই। যিনি বদলি হজ্জ করাচ্ছে, তিনি যদি হজ্জ করার নির্দেশ দেয় আর বদলি-হজ্জকারী উমরা করে, তবে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কেননা সে নির্দেশ মোতাবেক কাজ করেনি। আর যদি সে উমরা করে, ও পরবর্তীতে মক্কা থেকে হজ্জ করে তা হলে সকলের মতে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কেননা বদলি-হজ্জকারীর প্রতি, যিনি হজ্জ করালেন, তার নির্দেশ ছিল সফরটা হজ্জের জন্য করার, পক্ষান্তরে সে সফর ব্যতীতই করেছে। কারণ প্রথম সফরটা সে উমরার জন্য ব্যবহার করেছে। তাই নির্দেশের উল্টো কাজ করেছে, সে জন্যই তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদি নির্দেশদাতা হজ্জ ও উমরা উভয়টা এক এহরামে একত্রিত করে আদায় করতে বলেন, আর বদলি-হজ্জকারী নির্দেশদাতার জন্য শুধু হজ্জ করল, কিন্তু উমরা করল নিজের জন্য, তবে সে—ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর এক আপাত বর্ণনা অনুসারে—নির্দেশের উল্টো করল।[5]

    ওপরের উদ্ধৃতি এটা স্পষ্ট যে বদলি-হজ্জ যিনি করাচ্ছেন তাঁর কথা মতো হজ্জ সম্পাদন করতে হবে। তিনি যে ধরনের নির্দেশ দেবেন সে ধরনের হজ্জ করতে হবে। নির্দেশ মোতাবেক হজ্জ না করলে কোথায় কোথায় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। বদলি-হজ্জকারীকে, সর্বাবস্থায় ইফরাদ হজ্জ করতে হবে, এ কথা ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মুহাম্মদ ও ইমাম আবু ইউসুফ কেউই বলেননি।

    [1] - يارسول الله إن فريضة الله على عباده ، أدركت أبي شيخا كبيرا لا يثبت على الراحلة ، أفأحج عنه ؟ قال: نعم ، وذلك في حجة الوداع (বোখারি : হাদিস নং ১৪১৭) [2] قال يا رسول الله إن أبي شيخ كبير لا يستطيع الحج والعمرة والظعن فقال حج عن أبيك واعتمر (তিরমিযী : হাদিস নং ৮৫২) [3] - عن ابن عباس أن رسول الله سمع رجلا يقول لبيك عن شبرمة فقال من شبرمة؟ قال أخي أو قريب لي. قال :هل حججت؟ قال لا قال حج عن نفسك ثم حج عن شبرمة (আবুদাউদ : হাদিস নং ১৪২৪) [4] - মুসলিম : হাদিস নং ১২১৮ [5] - বাদায়েউস্ সানায়ে : খন্ড ২, পৃ: ২১৩-২১৪


     হজ্বের ফজিলতঃ



    মাবরুর হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।[1] যে হজ্জ করল ও শরিয়ত অনুমতি দেয় না এমন কাজ থেকে বিরত রইল, যৌন-স্পর্শ রয়েছে এমন কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকল, সে তার মাতৃ-গর্ভ হতে ভূমিষ্ট ‘হওয়ার দিনের মতো পবিত্র হয়ে ফিরে এল।[2] ‘আরাফার দিন এতো সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য কোনো দিন দেন না। এদিন আল্লাহ তাআলা নিকটবর্তী হন ও আরাফার ময়দানে অবস্থানরত হাজিদেরকে নিয়ে তিনি ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন, ও বলেন ‘ওরা কী চায়?।’[3]

    সর্বোত্তম আমল কী এ ব্যাপারে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে বললেন, ‘অদ্বিতীয় আল্লাহর প্রতি ঈমান, ও তারপর মাবরুর হজ্জ যা সকল আমল থেকে শ্রেষ্ঠ। সূর্য উদয় ও অস্তের মধ্যে যে পার্থক্য ঠিক তারই মত।’[4] অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘উত্তম আমল কি এই মর্মে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল। উত্তরে তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান। বলা হল, ‘তারপর কী’? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ। বলা হল তারপর কোনটি? তিনি বললেন, মাবরুর হজ্জ।[5] একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রশ্ন করে আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি আপনাদের সাথে জিহাদে ও অভিযানে যাব না? তিনি বললেন, ‘তোমাদের জন্য উত্তম ও সুন্দরতম জিহাদ হল ‘হজ্জ’, তথা মাবরুর হজ্জ।’’[6] ‘হজ্জ ও উমরা পালনকারীগণ আল্লাহর অফদ-মেহমান। তারা যদি আল্লাহকে ডাকে আল্লাহ তাদের ডাকে সাড়া দেন। তারা যদি গুনাহ মাফ চায় আল্লাহ তাদের গুনাহ মাফ করে দেন।’[7] আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, ‘এক উমরা হতে অন্য উমরা, এ দুয়ের মাঝে যা কিছু (পাপ) ঘটবে তার জন্য কাফফারা। আর মাবরুর হজ্জের বিনিময় জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।’’[8] হাদিসে আরো এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, ‘কারো ইসলাম-গ্রহণ পূর্বকৃত সকল পাপকে মুছে দেয়। হিজরত তার পূর্বের সকল গুনাহ মুছে দেয়, ও হজ্জ তার পূর্বের সকল পাপ মুছে দেয়।[9] ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা পর পর হজ্জ ও উমরা আদায় করো। কেননা তা দারিদ্র্য ও পাপকে সরিয়ে দেয় যেমন সরিয়ে দেয় কামারের হাপর লোহা-স্বর্ণ-রুপার ময়লাকে। আর হজ্জে মাবরুরের ছোয়াব তো জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।[10]

    উপরে উল্লেখিত হাদিসসমূহের বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। তাই হজ্জ পালনেচ্ছু প্রতিটি ব্যক্তিরই উচিৎ পবিত্র হজ্জের এই ফজিলতসমূহ ভরপুরভাবে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করে যাওয়া। হজ্জ কবুল হওয়ার সকল শর্ত পূর্ণ করে সমস্ত পাপ ও গুনাহ থেকে মুক্ত থেকে কঠিনভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা।

    [1] - والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة (বোখারি : হাদিস নং ১৬৫০ ) [2] - فلم يرفث ولم يفسق ، رجع كيوم ولدته أمه من حج لله (বোখারি: হাদিস নং ১৪২৪) [3] -মুসলিম : ২/৯৮৩ [4] - عن ماعز التميمي ু رضى الله عنه ু عن النبي صلى الله عليه وسلم : أنه سئل أي الأعمال أفضل ؟ قال : إيمان بالله وحده ، ثم حجة برة تفضل سائر الأعمال ، كما بين مطلع الشمس إلى مغربها (আহমদ : ৪/৩৪২) [5] - سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم ، أي الأعمال أفضل ؟ قال : الإيمان بالله ورسوله ، قيل : ثم ماذا ؟ قال جهاد في سبيل الله ، قيل ثم ماذا ؟ قال حج مبرور (বোখারি : ১৪২২) [6] - عن عائشة أم المؤمنين ু رضى الله عنها ু قالت : قلت يارسول الله ، ألا نغزو ونجاهد معكم ؟ قال : لَكُنَّ أفضل الجهاد وأجمله الحج ، حج مبرور (বোখারির ব্যাখ্যা ফাতহুল বারি : ৪/১৮৬১) [7] - عن أبي هريرة رضى الله عنه ، أن رسول الله قال : الحجاج والعمار وفد الله ، إن دعوه أجابهم وان استغفروه غفر لهم ইবনে মাযাহ : হাদিস নং ২৮৮৩ ) [8] - عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما ، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة ،، (বোখারি : হাদিস নং ১৬৫০) [9] - إن الإسلام يهدم ما كان قبله ، و أن الهجرة تهدم ما كان قبلها ، وأن الحج يهدم ما كان قبله ،، (মুসলিম : হাদিস নং১৭৩) [10] - تابعوا بين الحج والعمرة ، فإنهما ينفيان الفقر والذنوب كما ينفي الكير خبث الحديد والذهب والفضة وليس للحج المبرور ثواب إلا الجنة (আলবানি : সহিহুন্নাসায়ি : ২/৫৫৮)

    hag


    সূরা আল হাশর:7 - রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। সূরা মুহাম্মদ:33 - হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।