• Latest post

    গীবত ও পরনিন্দার ভয়াবহতা, গীবতকারীর পরিনতি, গরনিন্দাকারীর শাস্তি,

    গীবত (পরনিন্দা) নিষিদ্ধ এবং বাক্ সংযমের নির্দেশ ও গুরুত্ব 

    মহান আল্লাহ বলেছেন,

    ﴿ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ ﴾ (الحجرات: ١٢) 

    অর্থাৎ তোমরা একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা (গীবত) করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভ্রাতার গোশত ভক্ষণ করতে চাইবে? বস্তুতঃ তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু। (সূরা হুজুরাত ১২ আয়াত)

    তিনি বলেছেন,

    ﴿وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۚ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا﴾ (الاسراء: ٣٦) 

    অর্থাৎ যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হইয়ো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাইল ৩৬ আয়াত)

    তিনি আরও বলেছেন,   ﴿ مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ﴾ (ق: ١٨)  

    অর্থাৎ মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে (তা লিপিবদ্ধ করার জন্য) তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে। (সূরা ক্বাফ ১৮ আয়াত)

    জেনে রাখুন যে, যে কথায় উপকার আছে বলে স্পষ্ট হয়, সে কথা ছাড়া অন্য সব (অসঙ্গত) কথা হতে নিজ জিহ্বাকে সংযত রাখা প্রত্যেক ভারপ্রাপ্ত মুসলিম ব্যক্তির উচিত। যেখানে কথা বলা ও চুপ থাকা দুটোই সমান, সেখানে চুপ থাকাটাই সুন্নত। কেননা, বৈধ কথাবার্তাও অনেক সময় হারাম অথবা মাকরূহ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। অধিকাংশ এরূপই ঘটে থাকে। আর (বিপদ ও পাপ থেকে) নিরাপত্তার সমতুল্য কোন বস্তু নেই।

    আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।” (বুখারী ও মুসলিম) [1]

    এ হাদিসে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, উপকারী কথা ছাড়া কোন কথা বলা উচিত নয়। অর্থাৎ সেই কথা যার উপকারিতা স্পষ্ট। পক্ষান্তরে যে কথার উপকারিতা সম্বন্ধে সন্দেহ হয়, সে কথা বলা উচিত নয়।

    আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা কি জান, গীবত কাকে বলে?” লোকেরা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন।’ তিনি বললেন, “তোমার ভাই যা অপছন্দ করে, তাই তার পশ্চাতে আলোচনা করা।” বলা হল, ‘আমি যা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার রায় কি? (সেটাও কি গীবত হবে?)’ তিনি বললেন, “তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তার গীবত করলে। আর তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তাকে অপবাদ দিলে।” (মুসলিম) [2]

    আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সর্বোত্তম মুসলিম কে?’ তিনি বললেন, “যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।” (মুসলিম) [3]

    সাহাল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী (অঙ্গ জিভ) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী (অঙ্গ গুপ্তা-ঙ্গ) সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব।” (বুখারী) [4]

    আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, “মানুষ চিন্তা-ভাবনা না করে এমন কথাবার্তা বলে ফেলে, যার দ্বারা তার পদস্খলন ঘ’টে পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকে বেশি দূরত্ব দোযখে গিয়ে পতিত হয়।” (বুখারী, মুসলিম) [5]

     আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখন আমাকে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হল, সে সময় এমন ধরনের কিছু মানুষের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ ছিল তামার, তা দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডল খামচে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি, প্রশ্ন করলাম, ওরা কারা? হে জিবরীল! তিনি বললেন, ওরা সেই লোক, যারা মানুষের গোশত ভক্ষণ করত ও তাদের সম্ভ্রম লুটে বেড়াত।” (আবূ দাউদ) [6]

    আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সম্ভ্রম ও ধন-সম্পদ অন্য মুসলিমের উপর হারাম।” (মুসলিম) [7]

     আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের সম্ভ্রম রক্ষা করবে, কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামের আগুন থেকে তার চেহারাকে রক্ষা করবেন।’’ (তিরমিযী- হাসান) [7]


    গীবত এর ভয়াবহতা,
    [1] সহীহুল বুখারী ৬০১৮, ৩৩৩১, ৫১৮৬, ৬১৩৬, ৬১৩৮, ৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮, তিরমিযী ১১৮৮, আহমাদ ৭৫৭১, ৯২৪০, ৯৩১২, ৯৫০৩, ১০০৭১, ১০৪৭৫, দারেমী ২২২২ 
    [2] মুসলিম ২৫৮৯, তিরমিযী ১৯৩৪, আবূ দাউদ ৪৮৭৪, আহমাদ ৭১০৬, ৮৭৫৯, ২৭৪৭৩, ৯৫৮৬, দারেমী ২৭১৪ 

    [3] সহীহুল বুখারী ১১, মুসলিম ৪২, তিরমিযী ২৫০৪, ২৬২৮, নাসায়ী ৪৯৯৯ 
    [4] সহীহুল বুখারী ৬৪৭৪, ৬৮০৭, তিরমিযী ২৪০৮, আহমাদ ২২৩১৬ 
    [5] সহীহুল বুখারী ৬৪৭৭, ৬৪৭৮, মুসলিম ২৯৮৮, তিরমিযী ২৩১৪
    [6] সহীহুল বুখারী ৬৫৮১, ৭৫১৭, আবূ দাউদ ৪৭৪৮, ৪৮৭৮
    [7] সহীহুল বুখারী ৫১৪৪, ৬০৬৬, মুসলিম ২৫৬৩, ২৫৬৪, তিরমিযী ১১৩৪, ১৯৮৮, নাসায়ী ৩২৩৯, ৪৪৯৬, ৪৫০৬, ৪৫০৭, ৪৫০৮, আবূ দাউদ ৩৪৩৮,
    [7] তিরমিযী ১৯৩১, আহমাদ ২৬৯৮৮, ২৬৯৯৫