দওক বা পালক সন্তান পালনের বিধান কী?
প্রশ্ন : *ইসলামে সন্তান দত্তক নেওয়ার বিধান আছে কি? থাকলে উত্তরাধিকারের নিয়ম কী?*
উত্তর : *ইসলামে দত্তক নেওয়া হারাম, দত্তক নেওয়া জায়েজ নেই। তবে মানুষকে (কোন সন্তানকে) আপনি দয়া করে তাঁকে লালন-পালন করতে পারেন শরীয়ার ভিত্তিতে। ,কিন্তু সন্তান দত্তক নেওয়া জায়েজ নেই, এটা হিন্দুদের মধ্যে আছে। এটা কখনো ইসলামে নেই। ইসলামে দত্তক নিলে সে সন্তান কোনো ওয়ারিশ হবে না, সে কোনো সম্পত্তির ভাগ পাবে না।*
পালক সন্তান পালনের শরীয়াগত শর্তাবলীঃ
পালক সন্তান পালনের শরীয়াগত শর্তাবলীঃ
১. *পালক সন্তানের আসল বাপের পরিচয় গোপন করা যাবে না,করলে তা হারাম।*
২. পালক সন্তানকে নিজের সন্তান বা নিজের ছেলে বলে পরিচয় দেয়া যাবে না, দিলে তা হারাম।
৩. *একইভাবে পালক সন্তান সেই পিতাকে আসল পিতা বলে পরিচয় দিতে পারবে না, দিলে তা হারাম।*
৪. সন্তান কেনা বেচা করা যাবে না। এটি হারাম।
৫. *পালক সন্তান বড় হবার (বয়প্রাপ্ত) হবার সাথে সাথেই পালক সন্তানের প্রতি মাতা পিতার পর্দা করা ফরজ হবে।*
৬. পালক সন্তানের আসল মা বাবাকে তার সন্তানের সাথে সম্পর্ক ছেদ করার শর্ত দেয়া যাবে না।দেখা সাক্ষাৎ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
৭. *পালক সন্তানের সার্টিফিকেটে বা জন্ম নিবন্ধনে তার আসল পিতার নাম লিখতে হবে। নকল পিতার নাম লেখা যাবে না, লিখলে তা হারাম।*
৭. *পালক সন্তানের সার্টিফিকেটে বা জন্ম নিবন্ধনে তার আসল পিতার নাম লিখতে হবে। নকল পিতার নাম লেখা যাবে না, লিখলে তা হারাম।*
৮. *পালক সন্তান স ম্পত্তির ভাগ পাবে না/উত্তরাধিকার সম্পত্তির অধিকারী হবে না*
৯. *যে ব্যক্তি অন্যকে পিতা বলে দাবী করবে অথচ সে জানে যে, এ ব্যক্তি তার পিতা নয় তার জন্য জান্নাত হারাম।* (সহীহ বুখারী হা: ৬৭৬৬, সহীহ মুসলিম হা: ৬৩)
⛔ *পালক সন্তানের প্রতি পর্দার বিধানঃ*
পালক সন্তান এক-দুই চুমুক দুধ পান করলেই বিয়ে হারাম সাব্যস্ত হয় না বা পর্দা রহিত হয় না।
⛔নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ *একবার দু'বার দুধপান অথবা এক চুমুক, দু’চুমুক হারাম সাব্যস্ত করে না।* (মুসলিম ৩৪৮৫)
(কোন মহিলার দুধ) পাঁচ বার পেট ভরে খাওয়াতে হারাম সাব্যস্ত হবে প্রসঙ্গেঃ
⛔... *কুরআনে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ “দশবার দুধপানে হারাম সাব্যস্ত হয়"। অতঃপর তা রহিত হয়ে যায় خَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ এর দ্বারা *“পাঁচবার পান দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়"।* অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন অথচ ঐ আয়াতটি কুরআনের আয়াত হিসেবে তিলাওয়াত করা হত।*
(মুসলিম ৩৪৮৯)
⛔... *কুরআনে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ “দশবার দুধপানে হারাম সাব্যস্ত হয়"। অতঃপর তা রহিত হয়ে যায় خَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ এর দ্বারা *“পাঁচবার পান দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়"।* অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন অথচ ঐ আয়াতটি কুরআনের আয়াত হিসেবে তিলাওয়াত করা হত।*
(মুসলিম ৩৪৮৯)
কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা এই দত্তকপ্রথা নিষেধ করার জন্য সরাসরি তাঁর নবীকে দিয়ে একটি বিরাট কাজ করিয়েছেন। সেটা হচ্ছে, জায়েদ ইবনে হারজ, যাকে বলা হতো জায়েদ ইবনে মুহাম্মদ, অর্থাৎ মুহাম্মদের(সঃ) ছেলে জায়েদ। সেটা বন্ধ করার জন্য।
⛔আল্লাহতায়ালা বলেছেন, *‘যাদের তোমরা সন্তান বলে ডাকো, তারা তোমাদের সন্তান নয়।’* তা সরাসরি *আল্লাহতায়ালা নিষেধ করে দিয়েছেন সূরা আহজাবে*। এর পর আল্লাহতায়ালা বলেছেন, *এগুলো তোমাদের মুখের কথা, আল্লাহ সঠিক কথা বলেন।*
অর্থাৎ দত্তক নেওয়া কোনোভাবেই জায়েজ নেই। এ জন্য জাহেলি যুগে নবী (সা.) যাঁকে লালন-পালন করেছেন, আল্লাহতায়ালার নির্দেশে তাঁর(পালক সন্তানের) স্ত্রীকে তিনি বিয়ে করে দেখিয়ে দিয়েছেন।
অর্থাৎ দত্তক নেওয়া কোনোভাবেই জায়েজ নেই। এ জন্য জাহেলি যুগে নবী (সা.) যাঁকে লালন-পালন করেছেন, আল্লাহতায়ালার নির্দেশে তাঁর(পালক সন্তানের) স্ত্রীকে তিনি বিয়ে করে দেখিয়ে দিয়েছেন।
✅ *আল্লাহতায়ালা বলে দিয়েছেন, ‘যাদের তারা নিজের সন্তান বলে ডাকে, তাদের স্ত্রীকে বিয়ে করা হারাম নয়, বরং তা হালাল।’ এটা প্রমাণ করার জন্য আল্লাহতায়ালা তাঁর(পালক) সন্তানের স্ত্রীকে, অর্থাৎ জায়নাবকে বিয়ে দিয়েছেন মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে। সুতরাং ইসলামে দত্তকের কোনো সুযোগ নেই।*
⛔ *যে ব্যক্তি অন্যকে পিতা বলে দাবী করবে অথচ সে জানে যে, এ ব্যক্তি তার পিতা নয় তার জন্য জান্নাত হারাম*। (সহীহ বুখারী হা: ৬৭৬৬, সহীহ মুসলিম হা: ৬৩)
⛔⛔ *পালক/দত্তক সন্তানের বিধান*⛔⛔
⛔ *কোন লোক যদি নিজ পিতা সম্পর্কে অবগত থাকা সত্ত্বেও অন্য কাউকে তার পিতা বলে দাবী করে তবে সে আল্লাহর সাথে কুফরী করল এবং যে ব্যক্তি নিজেকে এমন বংশের সঙ্গে বংশ সম্পর্কিত দাবী করল যে বংশের সঙ্গে তার কোন বংশ সম্পর্ক নেই, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়*
(বুখারী ৩৫০৮)
(বুখারী ৩৫০৮)
⛔ *মহানবী (সা.)-এর নবুওয়েতের পূর্বে কৃতদাস শিশু যায়েদ ইবনে হারেছাকে মুক্ত করে দত্তক পুত্র করে রেখেছিলেন। সে রাসূল (সা.)-এর ঘরে, তারই পিতৃস্নেহে লালিত-পালিত হয়ে বড় হয়। আমরা তাকে যায়েদ ইবনে মুহাম্মাদ (মুহাম্মদের পুত্র যায়েদ) বলেই সম্বোধন করতাম। যখন সুরা আহজাবের ৫ নম্বর আয়াত অবতীর্ণ করে আল্লাহ নির্দেশ দিলেন, ‘তাদের (পালক সন্তানদের) পিতৃ-পরিচয়ে তোমরা তাদের ডাকবে’- তখন আমরা আমাদের পূর্বের ডাক পরিবর্তন করি।* (সহিহ মুসলিম:৬৪১৫)
⛔.. *এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন।*
(সুরা আহযাব-৪)
(সুরা আহযাব-৪)
⚠ *তোমরা তাদেরকে(পালক সন্তানকে)তাদের পিতৃ পরিচয়ে ডাকো.। আল্লাহর নিকট এটাই বেশী ন্যায়সংগত। অতঃপর যদি তোমরা তাদের পিতৃ পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই এবং বন্ধু। আর এ ব্যাপারে তোমরা কোন অনিচ্ছাকৃত ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তর যা স্বেচ্ছায় করেছে (তা অপরাধ), আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।*
(সুরা আল আহযাব ৫)
(সুরা আল আহযাব ৫)
*লালন-পালনকারীকে সম্মান ও কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মা-বাবা ডাকা বৈধ হলেও অনুত্তম ও অনুচিত। কেননা এতে জাহেলিয়াতের কুসংস্কারের সঙ্গে সাদৃশ্য হয়ে যায়ইসলাম এ ধরনের সাদৃশ্য পছন্দ করে না।* (আহকামুল কোরআন : ৩/২৯২)
(আর এতে পালক সন্তানের মনে মিথ্যে আশার সৃষ্টি হতে পারে।)
(আর এতে পালক সন্তানের মনে মিথ্যে আশার সৃষ্টি হতে পারে।)
♦♦♦
*পালক-পুত্রদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীদেরকে বিবাহ করা বৈধ, এরা আপন ছেলেদের মত নয়ঃ
✅আল্লাহ বলেন,
*...অতঃপর যায়্দ(নবীর পালক পুত্র) যখন তার (স্ত্রী যায়নাবের) সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল(তালাক দিল) তখন আমি(আল্লাহ) তাকে (যায়নবকে) তোমার সঙ্গে(নবীর সাথে) বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দিলাম যাতে মু’মিনদের পোষ্য/পালক পুত্ররা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে (তালাক দিলে) সেসব নারীকে(পালক পুত্রের স্ত্রীকে) বিবাহ করার ব্যাপারে মু’মিনদের কোন বিঘ্ন না হয়। আল্লাহর আদেশ কার্যকরী হবেই।*
[সুরা আহযাব ৩৭]
*...অতঃপর যায়্দ(নবীর পালক পুত্র) যখন তার (স্ত্রী যায়নাবের) সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল(তালাক দিল) তখন আমি(আল্লাহ) তাকে (যায়নবকে) তোমার সঙ্গে(নবীর সাথে) বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দিলাম যাতে মু’মিনদের পোষ্য/পালক পুত্ররা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে (তালাক দিলে) সেসব নারীকে(পালক পুত্রের স্ত্রীকে) বিবাহ করার ব্যাপারে মু’মিনদের কোন বিঘ্ন না হয়। আল্লাহর আদেশ কার্যকরী হবেই।*
[সুরা আহযাব ৩৭]
*পালক সন্তান উত্তরাধিকার সম্পত্তির অধিকারী হবে না, লালন-পালনকারীর মৃত্যুর পর ওই সন্তান উত্তরাধিকার হিসেবে তার সম্পত্তি থেকে কোনো অংশ পাবে না। লালন-পালনকারীরাও ওই সন্তানের ওয়ারিশ হবে না। হ্যাঁ, লালনকারী জীবদ্দশায়ই পালক সন্তানকে সম্পত্তি থেকে দান করতে পারবেন বা মৃত্যুর পর তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ দেওয়ার অসিয়ত করে যেতে পারবেন। শরিয়তের বিধান অনুযায়ী এই অসিয়ত কেবল এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকেই কার্যকর হবে। অনুরূপ সন্তানের আসল মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজন থেকে অবশ্যই সে উত্তরাধিকার সম্পত্তির অধিকারী হবে। তাকে পালক দেওয়ায় তার উত্তরাধিকার সম্পত্তির অধিকার খর্ব হয়নি।* (তাকমিলাতু ফাতহিল কাদির : ১০/১২২)
*এটা মনে করার সুযোগ নেই যে পালক নেওয়ায় সন্তানের আসল মা-বাবা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন লালনকারীই তার সব কিছুএটা মনে করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।*
*সন্তান কেনা যেমন হারাম কাজ, তেমনি সন্তান বেচা ও হারাম কাজ।*
*ইসলাম সওয়াবের নিয়তে অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে বলেছে, কিন্তু সন্তান দখল করা কিংবা তার প্রকৃত পরিচয় বিলুপ্ত করার অনুমতি দেয়নি। অনেক সময় দেখা যায়, টাকার বিনিময়ে গরিব মা-বাবা সন্তান দত্তক দেন। এটি হল সন্তান বেচাকেনা । এটি কেবল অমানবিকই নয়, ঘৃণ্যও বটে। ইসলামে এ ধরনের স্বাধীন মানুষ ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ হারাম।*
আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন যে, কিয়ামতের দিবসে আমি নিজে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবো। এক ব্যক্তি, যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করল। আরেক ব্যক্তি, *যে কোন স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করল। আর এক ব্যক্তি, যে কোন মজুর নিয়োগ করে তার হতে পুরো কাজ আদায় করে এবং তার পারিশ্রমিক দেয় না।*
(বুখারী ২২২৭)
(বুখারী ২২২৭)