• Latest post

    শির্কের ভয়াবহতা, যারা শির্ক করে তাদের পরিনতি,

     শির্কের ভয়াবহতা ও শির্ক করার পরিনতি:

    নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না ; এ ছাড়া সব কিছু যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে সে ভিষণভাবে পথভ্রষ্ট হয় ”
    লুকমান-১৩৷
    কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন ; এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম ; যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই ”
    নাহল-৩৩,
    তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কোন কিছুকেই শরীক করো না ”
    মায়েদা-৭২,
    আবূ হুরাইরাহ  হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেনঃ তোমরা ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বেঁচে থাক। আর তা হল আল্লাহর সাথে শরীক স্থির করা ও যাদু করা।[1]
    আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘আমি সমস্ত অংশীদারদের চাইতে অংশীদারি [শির্ক] থেকে অধিক অমুখাপেক্ষী। কেউ যদি এমন কাজ করে, যাতে সে আমার সঙ্গে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করে, তাহলে আমি তাকে তার অংশীদারি [শির্ক] সহ বর্জন করি।’’ [অর্থাৎ তার আমলই নষ্ট করে দিই।] (মুসলিম) [2]
    আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে  ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কাবীরাহ গোনাহ হচ্ছে আল্লাহর সাথে শির্ক করা। মাতা-পিতার অবাধ্যাচরণ করা, [অন্যায় ভাবে] কোন প্রাণ হত্যা করা, মিথ্যা কসম খাওয়া।’’ (বুখারী) [3]
    আবূ বাকরাহ নুফাই‘ ইবনু হারেস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, (একদিন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বললেন, ‘‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় (কাবীরাহ গোনাহগুলো সম্পর্কে জ্ঞাত করবো না?’’ সবাই বললেন, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘(সেগুলো হচ্ছে) আল্লাহর সাথে শির্ক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া।’’ তিনি হেলান দিয়ে বসেছিলেন, এবার সোজা হয়ে বসে বললেন, ‘‘শুনে রাখ, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’’ এ কথাটি তিনি পুনঃ পুনঃ বলতে থাকলেন। এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, ‘আর যদি তিনি না বলতেন!’ (বুখারী ও মুসলিম) [4]
    আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (একবার) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মদ্বীনার কালো পাথুরে যমীনে হাঁটছিলাম। উহুদ পাহাড় আমাদের সামনে পড়ল। তিনি বললেন, ‘‘হে আবূ যার্র! এতে আমি খুশী নই যে, আমার নিকট এই উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ থাকবে, এ অবস্থায় তিনদিন অতিবাহিত হবে অথচ তার মধ্য হতে একটি দ্বীনারও আমার কাছে অবশিষ্ট থাকবে। অবশ্য তা থাকবে যা আমি ঋণ আদায়ের জন্য বাকী রাখব অথবা আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এইভাবে এইভাবে এইভাবে ডানে, বামে ও পিছনে খরচ করব।’’
    অতঃপর (কিছু আগে) চলে তিনি বললেন, ‘‘প্রাচুর্যের অধিকারীরাই কিয়ামতের দিন নিঃস্ব হবে। অবশ্য সে নয় যে সম্পদকে (ফোয়ারার মত) এইভাবে এইভাবে এইভাবে ডানে, বামে ও পিছনে ব্যয় করে। কিন্তু এ রকম লোকের সংখ্যা নেহাতই কম।’’
    তারপর তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তুমি এখানে বসে থাক, যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে (ফিরে) আসছি।’’ এরপর তিনি রাতের অন্ধকারে চলতে লাগলেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। হঠাৎ আমি এক জোর শব্দ শুনলাম। আমি ভয় পেলাম যে, কোনো শত্রু হয়তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে পড়েছে।
    সুতরাং আমি তাঁর নিকট যাওয়ার ইচ্ছা করলাম, কিন্তু তাঁর কথা আমার স্মরণ হল, ‘‘তুমি এখানে বসে থাক, যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে (ফিরে) এসেছি।’’ সুতরাং আমি তাঁর ফিরে না আসা পর্যন্ত বসে থাকলাম। (তিনি ফিরে এলে) আমি বললাম, ‘আমি এক জোর শব্দ শুনলাম, যাতে আমি ভয় পেলাম।’ সুতরাং যা শুনলাম আমি তা তাঁর কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, ‘‘তুমি শব্দ শুনেছিলে?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ!’ তিনি বললেন, ‘‘তিনি জিব্রাঈল ছিলেন। তিনি আমার কাছে এসে বললেন, ‘আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মরবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ আমি বললাম, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে তবুও কি?’ তিনি বললেন, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)  [5]
    আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা সাত প্রকার সর্বনাশী কর্ম থেকে দূরে থাক।’’ লোকেরা বলল, ‘সেগুলো কি কি হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, [১] ‘‘আল্লাহর সাথে শির্ক করা। [২] যাদু করা। [৩] অন্যায়ভাবে এমন জীবন হত্যা করা, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন। [৪] সুদ খাওয়া। [৫] এতীমের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করা। [৬] ধর্মযুদ্ধ কালীন সময়ে [রণক্ষেত্র] থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করা। [৭] সতী-সাধ্বী উদাসীনা মু’মিনা নারীদের চরিত্রে মিথ্যা কলঙ্ক আরোপ করা।’’ (বুখারী-মুসলিম) [6]
    আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘হে আদম সন্তান! যখন তুমি আমাকে ডাকবে ও আমার ক্ষমার আশা রাখবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করব, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন; আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গোনাহ যদি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, তবুও আমি তোমাকে ক্ষমা করব; আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ পাপ নিয়ে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ কর; কিন্তু আমার সঙ্গে কাউকে শরীক না করে থাক, তাহলে পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে আমি তোমার নিকট উপস্থিত হব।’’ (তিরমিযী হাসান সূত্রে] [7]
     [1] সহীহ বুখারী (তাওহীদ),৫৭৬৪, ২৭৬৬] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৩৯)
    হাদিসের মানঃ সহিহ
    [2] সহীহুল বুখারী ২৯৮৫, ইবনু মাজাহ ৪২০২, আহমাদ ৭৯৩৯, ৯৩৩৬ হাদিসের মানঃ সহিহ
    [3] সহীহুল বুখারী ৬৬৭৫, ৬৮৭০, ৬৯২০, তিরমিযী ৩০২১, নাসায়ী ৪০১১, আহমাদ ৬৮৪৫, ৬৯৬৫, দারেমী ২৩৬০ হাদিসের মানঃ সহিহ
    [4] সহীহুল বুখারী ২৬৫৪, ৫৯৭৬, ৬২৭৩, ৬৯১৯, মুসলিম ৮৭, তিরমিযী ১৯০১, ২৯০১, ৩০১৯, আহমাদ ১৯৮৭২, ১৯৮৮১ হাদিসের মানঃ সহিহ
    [5] সহীহুল বুখারী ৬২৬৮, ১২৩৭, ২৩৮৮, ৩২২২, ৫৮২৭, ৬৪৪৩, ৬৪৪৪, ৭৪৮৭, মুসলিম ৯৪, তিরমিযী ২৬৪৪, আহমাদ ২০৮৪০, ২০৯০৫, ২০৯১৫, ২০৯৫৩ হাদিসের মানঃ সহিহ
    [6] সহীহুল বুখারী ২৭৬৬, ২৭৬৭, ৫৭৬৪, ৬৮৫৭, মুসলিম ৮৯, নাসায়ী ৩৬৭১, আবূ দাউদ ২৮৭৪ হাদিসের মানঃ সহিহ
    [7] তিরমিযী ৩৫৪০ হাদিসের মানঃ হাসান