• Latest post

    ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা জায়েজ কি ?

    ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা জায়েজ কি,

    মীলাদুন্নবী (ছাঃ)-এর অনুষ্ঠান( حكم الاحتفال بمولد النبى )
    অতঃপর আমার নিকট রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্ম উপলক্ষে মীলাদ অনুষ্ঠান করা, তাতে ক্বিয়াম করা, রাসূলকে সালাম দেওয়া এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক যে সকল ব্যাপার সাধারণতঃ মীলাদ মাহফিলে করা হয়ে থাকে সে সম্পর্কে বহুবার প্রশ্ন এসেছে।
    এর জওয়াবে কেবল এতটুকুই বলা যেতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এবং অন্য কারু জন্ম উপলক্ষে কোনরূপ অনুষ্ঠান করা শরী‘আতে জায়েয নয়। কেননা তা হ’ল শরী‘আতের মধ্যে নবোদ্ভূত বিষয় সমূহের অন্যতম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে তা করেননি, তার খুলাফায়ে রাশেদীনও করেননি এবং রাসূলের অন্যান্য ছাহাবী ও তাবেঈগণও তা কখনোই করেননি। অথচ তাঁরাই ছিলেন সুন্নাতে নববী সম্পর্কে দুনিয়ার সকল মানুষের চাইতে বেশী ওয়াকিফহাল, রাসূলের মহববতে সর্বাগ্রগণ্য এবং তাঁর সুন্নাত ও শরী‘আতের একনিষ্ঠ অনুসারী।
    রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ أَحْدَثَ فِىْ أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ- ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’।[1] অন্য হাদীছে বলা হয়েছে,
    عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ مِنْ بَعْدِيْ، تَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ- رواه أحمد وأبوداؤد والترمذي وابن ماجه-   
    ‘তোমাদের উপর পালনীয় হ’ল আমার সুন্নাত ও আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত। তোমরা তা কঠিনভাবে অাঁকড়ে ধর এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধর। আর ধর্মের নামে নতুন সৃষ্টি হ’তে সাবধান! নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ‘আত ও প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা’।[2] উপরোক্ত হাদীছ দু’টিতে বিদ‘আতের প্রবর্তন ও তার অনুসরণের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে।
    আল্লাহ রববুল আলামীন বলেছেন, وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا- (الحشر 7)- ‘আর  রাসূল তোমাদের নিকট যা নিয়ে আসেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা হ’তে বিরত থাক’ (হাশর ৫৯/৭)। তিনি বলেন, فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ- (النور 63)- ‘যারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আদেশ-নিষেধের বিরোধিতা করে তারা যেন এ বিষয়ে ভয় করে যে, তাদেরকে (দুনিয়াবী জীবনে) গ্রেফতার করবে নানাবিধ ফিৎনা এবং (পরকালীন জীবনে) গ্রেফতার করবে মর্মান্তিক আযাব’ (নূর ২৪/৬৩)। তিনি বলেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا- (الأحزاب 21)- ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতকে কামনা করে এবং আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ করে’ (আহযাব ৩৩/২১)। তিনি বলেন,
    وَالسَّابِقُوْنَ الْأَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِإِحْسَانٍ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا أَبَدًا، ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ-  (الةوبة ১০০)-
    ‘মুহাজির ও আনছারগণের মধ্যে যারা অগ্রবর্তী এবং যারা পরবর্তীতে নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসারী হয়েছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর আল্লাহ তাদের জন্য এমন উদ্যান সমূহ প্রস্ত্তত করে রেখেছেন। যার তলদেশ দিয়ে নদী সমূহ প্রবাহিত। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। আর এটাই হ’ল মহান সফলতা’ (তওবা ৯/১০০)। তিনি বলেন, اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلاَمَ دِيْنًا- (المائدة 3)- ‘আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য আমার প্রদত্ত দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহকে সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)। এই মর্মে আরও বহু আয়াত রয়েছে।
    অতঃপর এই সকল জন্ম দিবস সমূহের প্রবর্তন হ’তে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দ্বীনকে উম্মতের জন্য পূর্ণাঙ্গ করে দেননি এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-ও উম্মতের জন্য করণীয় অনেক কিছু পুণ্যপন্থা আমাদেরকে বাৎলে দিয়ে যাননি, যার জন্য পরবর্তীকালে কিছু ব্যক্তি আল্লাহ প্রদত্ত শরী‘আতের মধ্যে তাঁর অনুমতি ছাড়াই পুণ্যের নামে নতুন কিছু অনুষ্ঠানের উদ্ভব ঘটিয়ে ভেবে নিলেন যে, এর দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করা সম্ভব হবে।
    নিঃসন্দেহে এর মধ্যে বিরাট গুনাহ নিহিত রয়েছে এবং এটা স্বয়ং আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শামিল। অথচ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ এবং এই নে‘মতকে সম্পূর্ণ করে দিয়েছেন। আর  মহান রাসূল (ছাঃ) উক্ত দ্বীনকে তাঁর উম্মতের নিকট পুরাপুরিভাবেই পৌঁছে দিয়েছেন। মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার ও জাহান্নাম হ’তে পরিত্রাণ পাওয়ার কোন পথ-পন্থাই তিনি বলতে বাকী রেখে যাননি। যেমন ছহীহ হাদীছে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন যে,
    مَا بَعَثَ اللهُ مِنْ نَبِىٍّ إِلاَّ كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَّدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ- ‘প্রত্যেক নবীর উপর এটি অপরিহার্য করা হয়েছে যে, তিনি তাঁর উম্মতের নিকট আল্লাহর নিকট হ’তে আনীত যাবতীয় পুণ্যপথসমূহ বাৎলিয়ে দিবেন এবং তাদেরকে যাবতীয় অন্যায় পথ সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিবেন’।[3] অতঃপর এটা সকলের জানা বিষয় যে, আমাদের নবী (ছাঃ) দুনিয়ার সেরা নবী ও শেষনবী। তাই দ্বীনের সকল কথা উম্মতের নিকট পৌঁছানোর ব্যাপারে ও উপদেশ দানের ব্যাপারে তিনি সবার ঊর্ধ্বে।
    এক্ষণে যদি মীলাদ অনুষ্ঠান ধর্মীয় বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হ’ত, যদ্বারা আল্লাহ খুশী হন, তাহ’লে নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) এই ব্যাপারটি তাঁর উম্মতের নিকট বলে যেতেন অথবা তিনি নিজ জীবনে করে যেতেন কিংবা তাঁর ছাহাবীগণ করতেন। কিন্তু এরূপ কোন কিছুই যখন ঘটেনি তখন বুঝতে হবে যে, এটা ইসলামের মধ্যকার কিছুই নয় বরং তা সেই বিদ‘আত সমূহের  অন্তর্ভুক্ত, যে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর উম্মতকে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে গিয়েছেন। যা পূর্বোক্ত দু’টি হাদীছ ছাড়াও উক্ত মর্মের বহু হাদীছে তিনি বলেছেন। এতদ্ব্যতীত জুম‘আর খুৎবায় তিনি বলতেন, أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيْثِ كِتَابُ اللهِ وَخَيْرَ الْهَدْىِ هَدْىُ مُحَمَّدٍ وَشَرَّ الْأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ، رواه مسلم- ‘সর্বোত্তম হাদীছ হ’ল আল্লাহর কিতাব ও সর্বোত্তম হেদায়াত হ’ল মুহাম্মাদের হেদায়াত এবং সবচাইতে নিকৃষ্ট কর্ম হ’ল শরী‘আতের মধ্যে নতুন নতুন অনুষ্ঠানের উদ্ভব ঘটানো। আর প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা’।[4] এ প্রসঙ্গে অসংখ্য আয়াত ও হাদীছ রয়েছে। আলেমদের একটি বিরাট দল পূর্বোক্ত দলীল সমূহ ও অন্যান্য দলীলাদির প্রতি আমল করে প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠানের প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছেন ও তার পরিণতি সম্পর্কে উম্মতকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
    পরবর্তীকালে কিছু বিদ্বান এটাকে জায়েয রেখেছেন, যদি তার মধ্যে ধর্মীয় নীতি বিরোধী কোন অপকর্ম না হয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রশংসায় অতি বাড়াবাড়ি, নারী-পুরুষের সম্মিলন, বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি। তারা ধারণা করেন যে, মীলাদ হ’ল একটি ‘বিদ‘আতে হাসানাহ’ (উত্তম বিদ‘আত)। অথচ শরী‘আতের মূলনীতি (القائدة الشرعية) আমাদেরকে আমাদের বিতর্কিত বিষয় সমূহের মীমাংসার জন্য আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাতের প্রতি ধাবিত হ’তে বলে। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে,
    يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُوْلِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَّأَحْسَنُ تَأْوِيْلاً- (النساء 59)- ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর আমার রাসূলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের। যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদ কর, তাহ’লে বিষয়টিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা সত্যিকারভাবে আল্লাহ ও আখেরাতের উপরে বিশ্বাসী হও। আর এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম’ (নিসা ৪/৫৯)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
    وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيْهِ مِنْ شَيْءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللهِ- (الشوري ১০)-‘আর তোমরা যেসব বিষয়ে মতভেদ কর, তার ফায়ছালা তো কেবল আল্লাহর নিকট’ (শূরা ৪২/১০)।
    (এবারে আসুন মাননীয় পাঠক!) মীলাদ মাহফিলের এই বিতর্কিত মাসআলাটি নিয়ে আমরা প্রথমে আল্লাহর কিতাবের শরণাপন্ন হই। সেখানে আমাদেরকে রাসূলের প্রতিটি নির্দেশের অনুসরণ ও নিষেধ হ’তে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে এবং এটাও দেখছি যে, আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে এই উম্মতের জন্য পূর্ণ করে দিয়েছেন। অথচ উক্ত মীলাদ মাহফিল রাসূলের আনীত সেই দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় যে দ্বীনকে আল্লাহ আমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং যে ব্যাপারে আমাদেরকে রাসূলের অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতঃপর আসুন রাসূলের সুন্নাতের দিকে। সেখানে দেখছি যে, না রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা কখনও করেছেন, না কাউকে করার হুকুম দিয়েছেন, না তাঁর ছাহাবীগণ তা করেছেন। অতএব আমরা নিঃসন্দেহে বুঝতে পারি যে, তা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং নবোদ্ভূত বিষয় সমূহের অন্যতম এবং তা হ’ল ইহুদী ও খৃষ্টানদের ধর্মীয় উৎসবসমূহের অনুকরণ মাত্র।
    উপরোক্ত আলোচনা হ’তে যার সামান্যতম বোধশক্তি ও সত্যপ্রীতি এবং নিরপেক্ষ অনুসন্ধিৎসা রয়েছে, তিনি পরিষ্কার বুঝতে পারবেন যে, প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠান ইসলামী শরী‘আতের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং তা হ’ল বিদ‘আত সমূহের অন্তর্ভুক্ত। যা হ’তে বিরত থাকার জন্য আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে পূর্বেই সতর্ক করে দিয়েছেন। সুতরাং বিভিন্ন প্রান্তের বহু সংখ্যক লোক উক্ত মাহফিলের অনুষ্ঠান করে বলে কোন জ্ঞানী লোকের পক্ষে তা দ্বারা ধোঁকা খাওয়া উচিত নয়। কেননা সংখ্যাধিক্য দ্বারা সত্য নির্ধারিত হয় না বরং সত্য নির্ধারিত হয় কেবলমাত্র মযবুত শারঈ দলীল সমূহ দ্বারা। যেমন (সে যুগের সংখ্যাগরিষ্ঠ) ইহুদী-নাছারারা বলত, لَنْ يَّدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ كَانَ هُوْدًا أَوْ نَصَارَى تِلْكَ أَمَانِيُّهُمْ قُلْ هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ- البقرة 111)- ‘ইহুদী ও নাছারা ব্যতীত কেউই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (আল্লাহ বলেন) এটা ছিল তাদের একটা (অন্ধ) ধারণা মাত্র; (হে নবী!) তুমি বল যে, তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহ’লে দলীল পেশ কর’ (বাক্বারাহ ২/১১১)। আল্লাহ বলেন, وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوْكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ، (الأنعام 116)- ‘হে নবী! তুমি যদি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের অনুসরণ কর, তাহ’লে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে ...’ (আন‘আম ৬/১১৬)
    অতঃপর প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠান সমূহ বিদ‘আত হওয়া ছাড়াও এসবের অধিকাংশ বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম হ’তে মুক্ত নয়। যেমন নারী-পুরুষের সম্মিলন, বিভিন্ন গান-গযল ও বাদ্যযন্ত্রের আমদানী, জ্ঞান লোপকারী পানীয় সমূহ (মদ, তাড়ি, গাঁজা ইত্যাদি) পরিবেশন ইত্যাদি। এতদ্ব্যতীত তার মধ্যে সবচাইতে মারাত্মক ও বড় শিরক (الشرك الأكبر) হ’ল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রশংসায় অতিরঞ্জিত করা এবং অলি-আউলিয়াদের প্রতি অযথা ভক্তির আতিশয্য প্রদর্শন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আহবান করা ও তাঁর নিকট আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনা করা এবং এই বিশ্বাস রাখা যে, তিনি ‘গায়েব’-এর খবর জানেন প্রভৃতি নানা ধরনের কুফরী কর্মসমূহ লোকেরা মীলাদের মাহফিলে এবং অন্যান্য অলি-আউলিয়াদের স্মৃতি উৎসবে (ওরসে) করে থাকে।
    অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, إِيَّاكُمْ وَالْغُلُوَّ فِى الدِّيْنِ فَإِنَّمَا أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمُ الْغُلُوُّ فِى الدِّيْنِ، رواه ابن ماجه- ‘তোমরা ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা হ’তে বিরত থাক। কেননা এই বাড়াবাড়িই তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে (ইহুদী-নাছারাকে) ধ্বংস করেছে’।[5] তিনি আরও বলেন, لاَ تَطِرُوْنِىْ كَمَا أَطَرَتِ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ، فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ، فَقُوْلُوْا عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ، متفق عليه- ‘তোমরা আমার প্রশংসায় বাড়াবাড়ি কর না, যেমন বাড়াবাড়ি করেছে খৃষ্টানরা ঈসা ইবনে মারিয়ামকে নিয়ে। আমি শুধুমাত্র তাঁর একজন বান্দা। অতএব তোমরা আমাকে বল, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল’।[6]
    বিস্ময় ও আশ্চর্যের বিষয় এই যে, বহুলোক খুব খুশীর সাথে ও যথেষ্ট কষ্ট স্বীকার করে এই সব বিদ‘আতী মজলিসে যোগ দিতে আসে এবং তার সপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে। অথচ তারা সাপ্তাহিক জুম‘আ ও দৈনন্দিন ফরয ছালাতের জামা‘আত সমূহ হ’তে পিছিয়ে থাকে এবং এ সকল ব্যাপারে মোটেই মাথা ঘামায় না। এমনকি সে একবারও মনে করে না যে, সে একটা মহা অন্যায় কাজ করে চলেছে। নিঃসন্দেহে এটা তাদের দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক এবং (শরী‘আতের ব্যাপারে) অন্তর্দৃষ্টির অভাব ও রকমারি পাপাচার ও গুনাহের কাজে অভ্যস্ত হওয়ার ফলে তাদের অন্তরে যে মরিচা ধরে গেছে, এই সকল অপকর্ম তারই বাস্তব ফলশ্রুতি। আমরা আমাদের জন্য ও সকল মুসলমানের জন্য আল্লাহর নিকটে এসব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
    ‘মীলাদ’ সমর্থক লোকদের মধ্যে কিছু লোক এমন ধারণা রাখে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বয়ং মীলাদের মাহফিলে হাযির হন এবং সেজন্য তারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সম্মানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে (ক্বিয়াম করে) সালাম জানায় (যেমন, ইয়া নবী সালামু আলায়কা)। এটাই হ’ল সবচাইতে চরম মূর্খতা ও ভিত্তিহীন কর্ম। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ক্বিয়ামতের পূর্বে কবর থেকে বাইরে আসতে পারেন না। পারেন না কোন মানুষের সাথে মিলিত হ’তে কিংবা তাদের কোন মজলিসে যোগদান করতে। তিনি ক্বিয়ামত পর্যন্ত কবরেই থাকবেন এবং তাঁর পবিত্র রূহ তাঁর প্রতিপালকের নিকট মহা সম্মানিত ‘ইল্লীঈনে’ থাকবে। যেমন সূরায়ে মুমিনূনে এ সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে,  ثُمَّ إِنَّكُمْ بَعْدَ ذَلِكَ لَمَيِّتُوْنَ- ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُوْنَ- (المؤمنون ১৫-১৬) ‘অতঃপর তোমরা অবশ্যই মৃত্যুমুখে পতিত হবে’। ‘অতঃপর তোমরা ক্বিয়ামত দিবসে অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে’ (মুমিনূন ২৩/১৫-১৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
    أَنَا أَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ وَأَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ-رواه مسلم‘ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আমারই কবর বিদীর্ণ হবে এবং আমিই প্রথম শাফা‘আত করব ও আমারই শাফা‘আত সর্বপ্রথম কবুল করা হবে’।[7] অতএব তাঁর উপরেই বর্ষিত হেŠক তাঁর প্রতিপালকের সর্বোত্তম অনুগ্রহ ও শান্তি!
    উপরোক্ত আয়াতে কারীমা ও হাদীছ ছাড়াও এই মর্মে অন্যান্য বহু আয়াত ও হাদীছ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সহ দুনিয়ার সমস্ত মৃতব্যক্তি কেবলমাত্র ক্বিয়ামতের দিন কবর হ’তে উঠবেন; এর পূর্বে নয়। এ ব্যাপারে মুসলিম জাহানের সমস্ত আলেমই একমত, কারু কোন দ্বিমত নেই। অতএব প্রত্যেক মুসলমানকে এই সকল বিদ‘আত হ’তে সতর্ক থাকা প্রয়োজন এবং কিছু সংখ্যক মূর্খ ও তাদের অনুগামীরা যেসকল বিদ‘আত ও কল্পিত ধর্মানুষ্ঠান সমূহ আবিষ্কার করেছে, যার সপক্ষে আল্লাহ রববুল আলামীন কোন দলীল অবতীর্ণ করেননি- ঐ সকল অপকর্ম হ’তে সকলের সাবধান থাকা উচিত।
    والله المسةعان وعليه الةكلان ولا حول ولا قوة إلا بالله-
    অতঃপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষিত হৌক রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর। আর এটা হ’ল আল্লাহর নৈকট্য লাভের উৎকৃষ্ট উপায় এবং সৎকর্ম সমূহের অন্যতম। যেমন আল্লাহ বলেছেন যে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতা মন্ডলী নবীর প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। অতএব হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ কর’ (আহযাব ৩৩/৫৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন’।[8] এটি সকল অবস্থায় পড়তে হয় এবং বিশেষভাবে তাকীদ হ’ল সকল ছালাতের শেষে পড়া। বরং সকল বিদ্বানের নিকট ওয়াজিব হ’ল প্রত্যেক ছালাতের শেষ বৈঠকে দরূদ পাঠ করা। অনেক স্থানে এটি পাঠ করা সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। যেমন আযানের পরে ও রাসূলের নাম বলার সময় এবং জুম‘আর দিনে ও রাতে। যে বিষয়ে বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
    আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, তিনি আমাদেরকে ও সকল মুসলমানকে দ্বীন বুঝার ও তার উপরে দৃঢ় থাকার তাওফীক দান করুন এবং সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরার ও বিদ‘আত হ’তে সাবধান থাকার বিষয়ে সকলের প্রতি অনুগ্রহ করুন! কেননা তিনি সর্বপ্রদাতা ও দয়াবান।
    وصلى الله وسلم على نبينا محمد وآله وصحبه-


    [1]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪০ ‘ঈমান’ অধ্যায়-১, ‘কিতাব ও সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ-৫।  
    [2]. আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬৫ ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫।
    [3]. মুসলিম হা/১৮৪৪, ‘ইমারত’ অধ্যায়-৩৩, وجوب الوفاء ببيعة الخلفاء الأول فالأول অনুচ্ছেদ-১০
    [4]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১ ‘ঈমান’ অধ্যায়-১, ‘কিতাব ও সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ-৫
    [5]. ইবনু মাজাহ হা/৩০২৯ ‘মানাসিক (হজ্জ)’ অধ্যায়-২৫, অনুচ্ছেদ-৬৩।
    [6]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪৮৯৭ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, ‘মানুষের গর্ব’ অনুচ্ছেদ-১৩। 
    [7]. মুসলিম হা/২২৭৮, মিশকাত হা/৫৭৪১ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘নবীকুল শিরোমণির মর্যাদা সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১। 
    [8]. মুসলিম, মিশকাত হা/৯২১ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘নবীর উপর দরূদ ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৬

    বইঃ বিদআত হতে সাবধান  লেখকঃ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ)

    ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ,
    ঈদে মিলাদুন্নবী,

    আসসালামু আলাইকুম, আমরা আমাদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত নই ৷ আমরা জানিনা আমরা কোন অবস্থানে আছি, আমরা সামনে এগোতে পারছি, না স্থির আছি, না পিছিয়ে যাচ্ছি ৷ আমরা ভালো কিছু করছি, না ভুল কিছু করছি ৷ আপনাদের মন্তব্যই আমাদেরকে সামনে এগোতে এবং আমাদের লক্ষার্জনে সাহায্য করবে ৷ আপনাদের মন্তব্যই আমাদেরকে দ্বীনের প্রচারে আরো আগ্রহী করে তুলবে ইনশাআল্লাহ ৷