• Latest post

    বেপর্দা বা পর্দাহীন নারীর পরিনতি, বেপর্দায় চলাফেরা করা নারীর ভয়াবহতা ৷

    বেপর্দায় চলাফেরা করা নারীর পরিনতিঃ

    যাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সরাসরি জাহান্নামের উল্লেখ করেছেন, বেপর্দা নারী তাদের অন্যতম। যা মানুষের জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। মানুষের ঈমান ধ্বংসেরও কারণ বটে।

    আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُوْنَ.

    ‘এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হ’তে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে যাতে তোমরা তাদের নিকট শামিত্ম পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিমত্মাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে’ (রূম ২১)।

    আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلاَ تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الأُولَى- ‘তোমরা স্বগৃহে অবস্থান কর, প্রাচীন জাহেলী যুগের নারীদের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করো না’ (আহযাব ৩৩)।

    জাহেলী যুগে নারীরা নগ্ন, অর্ধনগ্ন হয়ে নিজেদেরকে প্রদর্শন করত যাকে বর্বরতা ও অসভ্য বলা হয়েছে। আমাদের নারীদেরকে এ নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা পথ অবলম্বন করতে আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

    يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلاَبِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلاَ يُؤْذَيْنَ-

    ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বলে দিন যে, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না’ (আহযাব ৫৯)।

    এ আয়াতে স্বাধীন নারীদেরকে এক বিশেষ ধরনের পর্দার আদেশ দেয়া হয়েছে। তারা যেন মাথার উপর দিক থেকে চাদর ঝুলিয়ে মুখ ঢেকে রাখে। যাতে সাধারণ দাসীদের থেকে তাদের স্বাতন্ত্র্য ফুটে উঠে এবং দুষ্টদের কবল থেকে নিরাপদ থাকে। আল্লাহ্ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

    وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلاَ يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ-

    ‘হে নবী! আপনি ঈমানদার নারীদের বলে দিন। তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান থাকে তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তাদের গ্রীবা ও হবদেশ চাদর দ্বারা ঢেকে রাখে’ (নূর ৩১)।

    অত্র আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা নারীদেরকে দৃষ্টি নত রাখার জন্য আদেশ করেছেন। কারণ যেসব দৃশ্য পুরুষের জন্য ক্ষতিকর, সেসব দৃশ্য নারীর জন্যও ক্ষতিকর। আল্লাহ্ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

    وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ-

    ‘তোমরা তাদের নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এটা তোমাদের এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ’ (আহযাব ৫৩)।

    অত্র আয়াতের সারমর্ম এই যে, নারীদের কাছ থেকে অন্য কোন পুরুষ কোন ব্যবহারিক পাত্র, বস্ত্র ইত্যাদি নেয়া যরুরী হ’লে সামনে এসে নিবে না; বরং পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। দেয়াল, দরজা ও পোশাক অন্তরাল হ’তে পারে। অত্র আয়াতে আরও বলা হয়েছে যে, পর্দার এই বিধান পুরুষ ও নারী উভয়ের অন্তরকে মানসিক কুমন্ত্রণা থেকে পবিত্র রাখে।

    আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

    وَالْقَوَاعِدُ مِنْ النِّسَاءِ اللاَّتِي لاَ يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَنْ يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ وَأَنْ يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَهُنَّ وَاللهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ-

    ‘বৃদ্ধ নারী যারা বিবাহের আশা রাখে না, তাদের বহির্বাস পোষাক (চাদর, বোরকা ইত্যাদি) খুলে রাখলে কোন অপরাধ হবে না। তবে এটা হতে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (নূর ৬০)

    অত্র আয়াতে পর্দার বিশেষ পোষাক পরা ভাল বলা হয়েছে। যদিও সমাজে এ আয়াতের সরাসরি বিরোধিতা করা হয়। অর্থাৎ বয়ঃপ্রাপ্তা মা বোরকা পরিধান করেন অথচ সাথে পূর্ণ যুবতী মেয়ে নগ্ন-অর্ধনগ্ন হয়ে থাকে।

    عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اطَّلَعْتُ فِي الْجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الْفُقَرَاءَ وَاطَّلَعْتُ فِي النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ.

    ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘আমি জান্নাতের প্রতি লক্ষ্য করলাম দেখলাম জান্নাতের অধিকাংশ অধিবাসী দরিদ্র। অতঃপর জাহান্নামের প্রতি লক্ষ্য করলাম এবং দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী নারী’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৩৪; বাংলা ৯ম খন্ড, হা/৫০০৫ ‘মন ভোলানো’ অধ্যায়)।

    عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لاَ يَنْظُرُ الرَّجُلُ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ وَلاَ الْمَرْأَةُ إِلَى عَوْرَةِ الْمَرْأَةِ وَلاَ يُفْضِي الرَّجُلُ إِلَى الرَّجُلِ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ وَلاَ تُفْضِي الْمَرْأَةُ إِلَى الْمَرْأَةِ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ.

    আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এক পুরুষ অপর পুরুষের গুপ্তাঙ্গের প্রতি লক্ষ্য করতে পারে না। তেমনি এক নারী অপর নারীর গুপ্তাঙ্গের প্রতি লক্ষ্য করতে পারে না। দু’জন পুরুষ একটি কাপড়ের নীচে শয্যা গ্রহণ করতে পারে না। তেমনি দু’জন নারী একটি কাপড়ের নীচে শয্যা গ্রহণ করতে পারে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩১০০; বাংলা ৬ষ্ঠ খন্ড, হা/২৯৬৬ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)।

    অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) অনেক বিষয়ে পুরুষকে পুরুষ থেকে এবং নারীকে নারী থেকে পর্দা করতে বলেছেন। বিশেষ করে হাতের কব্জি ও মুখমন্ডল ব্যতীত একজন নারী অপর নারীর বাকী অঙ্গের প্রতি লক্ষ্য করতে পারে না’।

    عَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ تُبَاشِرُ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ فَتَنْعَتْهَا لِزَوْجِهَا كَأَنَّهُ يَنْظُرُ إِلَيْهاَ.

    ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এক নারী অপর নারীর অঙ্গের সাথে অঙ্গ লাগাতে পারে না বা স্পর্শ করতে পারে না। কারণ সে তার স্বামীকে ঐ নারীর অঙ্গের বিবরণ দিতে পারে তখন তার স্বামী ঐ নারীকে অন্তরের চোখে লক্ষ্য করবে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪০৯৯; বাংলা ৮ম খন্ড, হা/৩৯২১ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়)।

    অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) নারীকে নারী থেকে পর্দা করতে বলেছেন। সুতরাং আমাদের দেশে বিবাহের অনুষ্ঠানে হলুদ মাখানো প্রথা নিতান্তই জঘন্য।

    عَنْ جَرِيرِبْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ نَظْرَةِ الْفَجْأَةِ فَأَمَرَنِي أَنْ أَصْرِفَ بَصَرِى.

    জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল(ছাঃ)-কে নারীদের প্রতি হঠাৎ দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি আমাকে আমার চোখ ফিরিয়ে নিতে আদেশ করলেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৩১০৪; বাংলা ৬ষ্ঠ খন্ড, হা/২৯৭০ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) নারীদের প্রতি স্বেচ্ছায় লক্ষ্য করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।

    عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الْمَرْأَةَ تُقْبِلُ فِي صُوْرَةِ شَيْطَانٍ وَتُدْبِرُ فِي صُوْرَةِ شَيْطَانٍ إِذَا أَحَدُكُمْ أَعْجَبَتْهُ الْمَرْأَةُ فَوَقَعَتْ فِي قَلْبِهِ فَلْيَعْمِدْ إِلَى إِمْرَأَتِهِ فَلْيُوَاقِعْهَا فَإِنَّ ذَلِكَ يَرُدُّ ماَ فِي نَفْسِهِ.

    জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মহিলারা শয়তানের আকৃতিতে আসে আর শয়তানের আকৃতিতে যায়। যদি কোন নারীকে তোমাদের কাউকে ভাল লাগে এবং সে অন্তরে গেঁথে যায়, তাহ’লে সে যেন তার স্ত্রীর নিকট চলে যায় এবং তার সাথে মিলনে লিপ্ত হয়। নিশ্চয়ই এ মিলন অন্তরের মন্দ পরিকল্পনা দূর করে দিবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩১০৫)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বেহায়া নগ্ন নারীদেরকে শয়তানের সাথে তুলনা করেছেন। তাদের ক্ষতি অন্তরে জাগতে পারে বলে সতর্ক করেছেন।

    عَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَرأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتْ إِسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ.

    ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘নারী হচ্ছে গোপন বস্তু। যখন সে বাড়ি থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাকে নগ্নতার প্রতি ক্ষিপ্ত করে তুলে’ (তিরমিযী, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৩১০৯)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নারী পর্দাবিহীন অবস্থায় বের হ’লে শয়তান তাকে পাপের উপর ক্ষিপ্ত করে’।

    عِنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ تُسَافِرُمَرْأَةٌ مَسِيْرَةَ يَوْمٍ وَ لَيْلَةٍ إِلاَّ وَمَعَهَا ذُومَحْرَمٍ.

    আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘মাহরাম ব্যতীত কোন মহিলা একদিন এক রাতের সফর করতে পারে না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫১৫; বাংলা ৫ম খন্ড, হা/২৪০১ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) নারীদেরকে একা সফর করতে নিষেধ করেছেন।

    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا.

    আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী রয়েছে যাদেরকে এখনও আমি দেখিনি (প্রথম শ্রেণী) এমন সম্প্রদায় যাদের হাতে গরু পরিচালনা করা লাঠি থাকবে যা দ্বারা তারা মানুষকে প্রহার করবে। (দ্বিতীয় শ্রেণী) নগ্ন পোষাক পরিধানকারী নারী যারা পুরুষদেরকে নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা বক্র উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট উটের ন্যায় হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি তারা জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ জান্নাতের সেই সুগন্ধি এত বহুদূর হতে পাওয়া যায়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এক মাসের পথের দূরত্ব হতে পাওয়া যায়’ (মুসলিম, মিশকত হা/৩৫২৪; বাংলা ৭ম খন্ড, হা/৩৩৬৯)।

    অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) নগ্ন পোষাক পরিহিতা বেহায়া ঈমান ধ্বংসকারিণী নারীদের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি তাদেরকে জাহান্নামী বলেছেন। বিশেষ করে তাদের নগ্ন মাথার তীব্র সমালোচনা করেছেন।

    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَيَاءُ مِنَ الِإيْمَانِ وَالْإِيْمَانُ فِي الْجَنَّةِ.

    আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘লজ্জাই হচ্ছে ঈমান। ঈমান হচ্ছে জান্নাত লাভের মাধ্যম’ (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৭৭; বাংলা ৯ম খন্ড, হা/৪৮৫৫ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) লজ্জাকে ঈমান বলেছেন। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, ‘লজ্জা বিহীন নারী-পুরুষ সবকিছুই করতে পারে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৫০৭২; বাংলা ৯ম খন্ড, হা/৪৮৫১)। এ হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, যে নারী নগ্ন হয়ে চলে তার লজ্জা নেই।

    عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ... فَاتَّقُوا الدُّنْيَا واتَّقوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيْلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ.

    আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘.... তোমরা দুনিয়া এবং নারীদের থেকে সাবধান থাক। কারণ নিশ্চয়ই বনী ইসরাঈলের প্রথম দুর্ঘটনা নারীদের মধ্যেই ঘটে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮৬; বাংলা ৬ষ্ঠ খন্ড, হা/২৯৫২ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)।

    عَنْ أًسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا تَرَكْتُ بَعْدِيْ فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ.

    উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি আমার পরে এমন কোন জটিল সমস্যা ত্যাগ করিনি, পুরুষদের জন্য বেশী ক্ষতিকারক হতে পারে নারীদের চেয়ে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮৫)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) নারীদেরকে পুরুষদের জন্য সবচেয়ে বেশী ধ্বংসাত্মক বলে ঘোষণা করেছেন। কাজেই পুরুষদের সাবধান থাকা যরূরী।

    عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ الأَنْصَارِ يَا رَسُولَ اللهِ أَفَرَأَيْتَ الْحَمْوَ قَالَ الْحَمْوُ الْمَوْتُ.

    উক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা নারীদের নিকট যাওয়া থেকে সাবধান থাক। একজন ছাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! দেবর সম্পর্কে কি বলছেন? রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘দেবর মরণ সমতুল্য’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১০২; বাংলা ৬ষ্ঠ খন্ড, হা/২৯৬৯ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)।

    অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) পুরুষদেরকে নারী থেকে সাবধান থাকতে বলেছেন। আর ভাবীদেরকে দেবর থেকে সতর্ক থাকতে বলেছেন।

    عَنْ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِإِمْرَأَةٍ إِلاَّ كَانَ ثَالِثُهُمَا الشَّيْطانُ.

    ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘অবশ্যই কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হ’লে তৃতীয় জন হবে শয়তান’ (তিরমিযী, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/১৩১৮; বাংলা হা/২৯৮৪)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) পুরুষদেরকে অপর কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এবং শয়তান তাদেরকে বিপদগামী করবে বলে সাবধান করেছেন।

    قَالَ رَسُولُ ا للهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِيْنٍ أَذْهَبَ لِلُبِّ الرَّجُلِ الْحَازِمِ مِنْ إِحْدَيْ كُنَّ.

    একদা রাসূল (ছাঃ) মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘বুদ্ধি ও ধর্মের ব্যাপারে অপূর্ণতা থাকা সত্ত্বেও বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী পুরুষদের জ্ঞান তোমাদের অপেক্ষা আর কেউ অধিক বিনষ্ট করতে পারে এমন কাউকে আমি দেখিনি’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৯)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘জ্ঞানী ব্যক্তিও নারীদের চক্রান্ত থেকে রেহায় পায় না। নারীদের চক্রান্ত অত্যন্ত শক্তিশালী। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌ  ‘নিশ্চয়ই তোমাদের (নারীদের) চক্রান্ত শক্তিশালী’ (ইউসুফ ২৮)।

    আল্লাহ্ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا নিঃসন্দেহে শয়তানের ষড়যন্ত্র অত্যন্ত দুর্বল (নিসা ৭৬)।

    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لُبْسَةَ الْمَرْأَةِ وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لُبْسَةَ الرَّجُلِ-

    আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) সেই পুরুষের ওপর অভিশাপ করেছেন যে, মহিলার পোষাক পরিধান করে এবং সে মহিলার উপর অভিশাপ করেছেন যে পুরুষের পোষাক পরিধান করে (আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৪৪৬৯, বাংলা ৮ম খন্ড, হা/৪২৭০, হাদীছ ছহীহ)।

    عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ الْمُخَنَّثِينَ مِنْ الرِّجَالِ وَالْمُتَرَجِّلاَتِ مِنْ النِّسَاءِ .

    ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, নবী (ছাঃ) হিজড়ার বেশ ধারণকারী পুরুষের উপর অভিশাপ করেছেন এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী নারীর উপর অভিশাপ করেছেন (বুখারী, মিশকাত হা/৪৪২৮)।

    عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ يَسَارٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بِنْ عَمْرٍوعنِ النَبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلاَثَةٌ لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ وَالدَّيُّوثُ وَرَّجْلَةُ النِّسَاءِ.

    ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন- রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে না- (১) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (২) বাড়ীতে বেহায়াপনার সুযোগ প্রদানকারী (৩) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী’ (নাসাঈ, হাদীছ ছহীহ্, ছহীহ তারগীব হা/২০৭০)।

    عَنْ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ قَالَ قِيلَ لِعَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا إِنَّ امْرَأَةً تَلْبَسُ النَّعْلَ فَقَالَتْ لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَةَ مِنْ النِّسَاءِ

    আবূ মুলায়কা (রাঃ) বলেন, একদা আয়েশা (রাযিঃ)-কে বলা হল- একটি মেয়ে পুরুষের জুতা পরে। তখন আয়েশা (রাঃ) বললেন, রাসূল (ছাঃ) পুরুষের বেশধারী নারীর প্রতি অভিশাপ করেছেন (আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৪৪৭০, হাদীছ ছহীহ)।

    হাদীছসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হল যে, যেসব পোষাক পুরুষের পোষাক বলে পরিচিত সে সব পোষাক নারীরা পরিধান করলে তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ হবে। উল্লেখ্য নারীদের মাথার চুল ছোট করা পুরুষের বেশ ধারণ করার অমতর্ভুক্ত।


    বেপর্দা নারীর পরিনতি ও শাস্তি,
    পর্দাহীন নারীর পরিনতি,