সূরা নাস বাংলা অর্থসহ উচ্চারন ও শানে নূযুল, সূরালনাস এর ফযীলত,
সূরা নাস (মানব জাতি) সূরা-১১৪, মাদানী :
بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ (1) مَلِكِ النَّاسِ (2) إِلَهِ النَّاسِ (3) مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ (4) الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ (5) مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ (6)
উচ্চারণ : (১) ক্বুল আ‘ঊযু বি রব্বিন্না-স (২) মালিকিন্না-স (৩) ইলা-হিন্না-স (৪) মিন শার্রিল ওয়াস্ওয়া-সিল খান্না-স (৫) আল্লাযী ইয়ুওয়াসভিসু ফী ছুদূরিন্না-স (৬) মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-স।
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)
অনুবাদ : (১) বলুন! আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার (২) মানুষের অধিপতির (৩) মানুষের উপাস্যের (৪) গোপন কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হ’তে (৫) যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তর সমূহে (৬) জিনের মধ্য হ’তে ও মানুষের মধ্য হতে।
নামকরণ:
সূরা ফালাক ও সূরা নাস উভয় সূরার নামকরণ করা হয়েছে সূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত শব্দ থেকে। ফালাক (الفلق) শব্দের অর্থ : প্রভাতকাল। আর নাস (النَّاس) অর্থ : মানুষ। এ দুই সূরাকে একত্রে معوذتان বা আশ্রয় প্রার্থনা করার দুই সূরা বলা হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জাদুগ্রস্থ হওয়ার পর এ সূরাদ্বয় দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা হলে আল্লাহ তা‘আলার রহমতে তিনি সুস্থ হন, তাই এ নামেও এ সূরাদ্বয় পরিচিত।
শানে নুযূল:
মা আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, মদীনার ইয়াহূদী গোত্র বনু যুরাইকের মিত্র লাবীদ বিন আসাম নামক জনৈক মুনাফিক তার মেয়েকে দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মাথার ছিন্নচুল ও চিরুনীর ছিন্ন দাঁত চুরি করে এনে তাতে জাদু করে এবং মন্ত্র পাঠ করে চুলে ১১টি গিরা দেয়। এর প্রভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কোন কাজ করলে ভুলে যেতেন ও ভাবতেন যে করেননি। অন্য বর্ণনা মতে ৪০ দিন বা ৬ মাস এভাবে থাকেন। এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বপ্নে দেখেন যে, দু’জন লোক এসে একজন তাঁর মাথার কাছে অন্যজন পায়ের কাছে বসে। অতঃপর তারা বলে যে, বনু যুরাইকের খেজুর বাগানে যারওয়ান কূয়ার তলদেশে পাথরের নীচে চাপা দেয়া খেজুরের কাঁদির শুকনো খোসার মধ্যে ঐ জাদু করা চুল ও চিরুনীর দাঁত রয়েছে। ওটা তুলে এনে গিরা খুলে ফেলতে হবে। রাসূল (সাঃ) সকালে আলী (রাঃ)-কে সেখানে পাঠান এবং যথারীতি তা তুলে আনা হয়। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সূরাদ্বয় পড়ে ফুঁ দিয়ে গিরাগুলো খুলে ফেলেন এবং তিনি সুস্থ হয়ে যান।
(সহীহ বুখারী হা. ৫৭৬৫, ৫৭৬৬)
আয়িশাহ (রাঃ) হতে অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (সাঃ)-এর যাদুকৃত চুল ও চিরুনীর দাঁত উদ্ধার হওয়ার পর সূরা ফালাক ও নাস নাযিল হয়। যার ১১টি আয়াতের প্রতিটি আয়াত পাঠের সাথে সাথে জাদুকৃত ১১টি চুলের গিরা পরপর খুলে যায় এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হালকা বোধ করেন ও সুস্থ হয়ে যান। (ইবনু কাসীর)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রতিশোধ নিতে বলা হলে তিনি বলেন : আল্লহ আমাকে আরোগ্য দান করেছেন। আমি অপছন্দ করি যে, মানুষের মাঝে খারাপ কিছু ছড়িয়ে দেওয়া হোক।
(সহীহ বুখারী হা. ৬৩৯১)
গুরুত্ব:
ওকবা বিন আমের আল যুহানী (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : আমার কাছে এমন কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে যার অনুরূপ আর দেখা যায়নি। তাহলো সূরা ফালাক ও সূরা নাস। (সহীহ মুসলিম হা. ৮১৪) অন্য বর্ণনাতে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : তুমি কি জান আজ রাতে এমন কিছু আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে যার সদৃশ ইতোপূর্বে কখনই দেখা যায়নি। তাহলো সূরা ফালাক ও নাস। (সহীহ মুসলিম হা. ৮১৪)
ফযীলত:
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) প্রত্যেক রাতে যখন বিছানায় যেতেন তখন দু হাত একত্রিত করে ফুঁ দিতেন, অতঃপর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করতেন। তারপর যথাসম্ভব দু হাত দিয়ে শরীর মাসাহ করতেন। তিনি প্রথমে মাথা, মুখমন্ডল ও শরীরের সম্মুখ ভাগ থেকে শুরু করতেন। (সহীহ বুখারী হা. ৫০১৭)
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিন ও মানুষের চোখ লাগা হতে আশ্রয় চাইতেন কিন্তু যখন সূরা ফালাক ও নাস অবতীর্ণ হলো তখন তিনি সব বাদ দিয়ে এ দু’টিই পড়তে থাকেন। (সূরা কালামের তাফসীর দ্রষ্ট্যব্য)
উকবা বিন আমের (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে প্রতি সালাতের শেষে সূরা ফালাক ও নাস পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। (তিরমিযী হা. ২৯০৩ আবূ দাঊদ হা. ১৫২, মিশকাত হা. ৯৬৯)
আয়িশাহ (রাঃ) বলেন : যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অসুখে পড়তেন, তখন সূরা ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁক দিয়ে নিজের দেহে হাত বুলাতেন। কিন্তু যখন ব্যাথা-যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে যেত তখন বরকতের আশায় আমি তাঁর দেহে হাত বুলিয়ে দিতাম। মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে : পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে সূরা ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁক দিতেন। (সহীহ বুখারী হা. ৫০৯২, সহীহ মুসলিম হা. ২১৯২)
একদা ওকবা বিন আমির (রাঃ)-কে নাবী (সাঃ) বলেন : হে ওকবা! আমি কি তোমাকে শ্রেষ্ঠ দুটি সূরা শিক্ষা দেব না? অতঃপর তিনি আমাকে সূরা ফালাক ও নাস শিক্ষা দিলেন। তারপর তিনি সালাতের ইমামতি করেন এবং সূরাদ্বয় পাঠ করলেন। সালাত শেষে আমাকে বললেন : হে ওকবা! তুমি এ দুটি সূরা পাঠ করবেÑযখন ঘুমাবে এবং যখন ঘুম থেকে জাগবে। (আহমাদ হা. ১৭৩৩৫, নাসায়ী হা. ৫৪৩৭, সহীহুল জামে হা. ৭৯৪৮)
এ ছাড়াও সূরাদ্বয়ের ফযীলত সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস পাওয়া যায়।
জাদু টোনা, ঝাড়ফুঁক ও তাবীজ কবচ : ইসলামে জাদু হারাম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে দূরে থাক। তার মধ্যে অন্যতম হলো জাদু। (সহীহ বুখারী হা. ২৭৬৬, সহীহ মুসলিম হা. ৮৯)
ইসলামে ঝাড়-ফুঁক সিদ্ধ তবে অবশ্যই সে ঝাড়-ফুঁক কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ অনুপাতে হতে হবে। যেমন সূরা ফালাক, নাস ও ইখলাস ইত্যাদি এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে যে সকল দু‘আ প্রমাণিত। যেমন
بِاسْمِ اللّٰهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللّٰهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللّٰهِ أَرْقِيكَ
আমি আল্লাহ তা‘আলার নামে আপনাকে ঝেড়ে দিচ্ছি এমন সব বিষয় হতে যা আপনাকে কষ্ট দেয়। প্রত্যেক হিংসুক ব্যক্তির বা হিংসুক চোখের অনিষ্ট হতে আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে নিরাময় করুন। আল্লাহ তা‘আলার নামে আপনাকে ঝেড়ে দিচ্ছি। (সহীহ মুসলিম হা. ২১৮৬)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-কে নিম্নোক্ত দু‘আর মাধ্যমে ঝাড়-ফুঁক করেছেন।
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
আমি আল্লাহ তা‘আলার পূর্ণ বাক্যসমূহের আশ্রয়ে নিচ্ছি প্রত্যেক শয়তান হতে, বিষাক্ত কীট পতঙ্গ ও প্রত্যেক অনিষ্টকারীর চক্ষু হতে। (সহীহ বুখারী হা. ৩৩৭১)। এ ছাড়াও ঝাড়-ফুঁকের অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে।
কিন্তু যদি ঝাড় ফুঁক কুরআন বা সহীহ সুন্নাহ অনুপাতে না হয়ে অন্য কোন বানোয়াট শির্কী কথা দ্বারা হয় তাহলে তা সম্পূর্ণ হারাম। বিভিন্ন বালা-মসিবত থেকে বাঁচার জন্য বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে তাবিজ ঝুলানো বা তাবিজ বাঁধা চাই তা কুরআন দ্বারা হোক আর অন্য কিছু হোক তা সম্পূর্ণ নিষেধ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : যে ব্যক্তি তাবিজ ঝুলালো সে শিরক করল। (আহমাদ হা. ১৭৪৫৮, সিলসিলা সহীহাহ হা. ৪৯২)
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : >
مَنْ تَعَلَّقَ شَيْئًا وُكِلَ إِلَيْهِ
যে ব্যক্তি কোন কিছু লটকায় তাকে তার দিকেই সোপর্দ করে দেয়া হবে। (তিরমিযী হা. ২০৭২, মিশকাত হা. ৪৫৫৬, সনদ হাসান।)
তাই ঝাড়-ফুঁেকর প্রয়োজন হলে একমাত্র কুরআন ও স্ন্নুাহ দ্বারাই করতে হবে।
তাফসীর:
(قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ) - الْفَلَقِ অর্থ الصبح
বা প্রভাত কাল, উষা। আবার ফালাক অর্থ বিদীর্ণ করা, ফেটে বের হওয়া। যেমন বলা হয় فلقت
الشئ أي شققته
আমি জিনিসটিকে ফালাক করেছি অর্থাৎ বিদীর্ণ করেছি। কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(إِنَّ اللّٰهَ فَالِقُ الْحَبِّ وَالنَّوٰي)
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ শস্য-বীজ ও আঁটি অঙ্কুরিত করেন’ (সূরা আন‘আম ৫: ৯৫)
যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা রাতের অন্ধকার ভেদ করে প্রভাতের আলো বিকশিত করেন, তাই তাকে ফালাক বলা হয়। আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাঃ)-কে প্রভাতের প্রতিপালকের কাছে, নিজের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশ দিচ্ছেন। অর্থাৎ এতে ইঙ্গিত রয়েছে সকল অনিষ্টের মূল হলো অন্ধকার। অনিষ্ট দূর হওয়ার পর আসে খুশির প্রভাত। মানুষ যখন বিপদে পতিত হয় তখন চেহারা মলিন ও অন্ধকার হয়ে যায়। আবার যখন বিপদ থেকে মুক্তি পায় তখন চেহারা খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
(شَرِّ مَا خَلَق)
অর্থাৎ সকল মাখলুকের অনিষ্ট হতে। হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন: জাহান্নাম, শয়তান ও তার সঙ্গী সাথী যা আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করেছেন।
(وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ) - غَاسِق
অর্থ: রাত। যেমন হাসান বাসরী ও কাতাদাহ (রহঃ) বলেন :
انه الليل اذا اقبل بظلامه
এটা (গাসাক) হলো রাত যখন তা অন্ধকারসহ আগমন করে। (ই্বনু কাসীর)
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন :
الغسق اول ظلمة الليل
গসাক হলো রাতের প্রথম অন্ধকার। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(أَقِمِ الصَّلٰوةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ إِلٰي غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْاٰنَ الْفَجْرِ)
‘সূর্য ঢলে পড়ার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম কর এবং কায়েম কর ফজরের সালাত।’ (সূরা ইসরা ১৭ : ৭৮)
আবার হাদীসে চাঁদকে غَاسِقٍ বলা হয়েছে। যেমন একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রাতে আয়িশাহ (রাঃ)-এর হাত ধরে চাঁদ দেখিয়ে বলেন : হে আয়িশাহ! এর অনিষ্ট হতে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। কেননা এটা হলো গাসেক যখন সে সমাগত হয়। (তিরমিযী হা. ৩৩৬৬, মিশকাত হা. ২৪৭৫ সনদ সহীহ।)
যারা গাসেক বলে রাতকে বুঝিয়েছেন আর যারা চাঁদকে বুঝিয়েছেন উভয়ের মাঝে কোন প্রার্থক্য নেই। কেননা চাঁদ রাতের একটি নিদর্শন।
وَقَبَ অর্থ : প্রবেশ করা, চলে যাওয়া ইত্যাদি। অর্থাৎ আমি আশ্রয় চাচ্ছি রাতের অনিষ্ট হতে যখন তা অন্ধকারে প্রবেশ করে। রাতের অন্ধকারেই হিংস্র জন্তু, ক্ষতিকর প্রাণী ও পোকা মাকড় অনুরূপভাবে অপরাধপ্রবণ হিংস্র মানুষ নিজ নিজ জঘন্য ইচ্ছা পূরণের আশা নিয়ে বাসা হতে বের হয়। এ বাক্য দ্বারা সে সকল অনিষ্টকর জীব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার কথা বলা হচ্ছে।
(وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثٰتِ فِي الْعُقَدِ)
হাসান বাসরী, যহহাক ও কাতাদাহ (রহঃ) বলেন :
النفاثات هن السواحر
নাফফাসাত হলো জাদুকারীগণ। আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন : গিরাতে ফুঁৎকারদানকারী আত্মার অনিষ্ট হতে অথবা গিরাতে ফুঁৎকারদানকারিণী মহিলাদের থেকে। (ফাতহুল কাদীর)
এ থেকে উদ্দেশ্য হলো : গিরাতে ফুঁক দানকারী প্রত্যেক জাদুকারিণী ও জাদুকর যারা মানুষের ক্ষতি করে থাকে।
حَسَدَ বলা হয় ‘যে ব্যক্তির সাথে হিংসা করা হচ্ছে তাকে আল্লাহ তা‘আলা যে নেয়ামত দান করেছেন তা দূরীভূত হয়ে যাওয়ার আকাক্সক্ষা করা।’ (ফাতহুল কাদীর)
এরূপ হিংসা করা কবীরাহ গুনাহ ও মারাত্মক ব্যাধি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন :
إِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ، فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ
তোমরা হিংসা থেকে বেঁেচ থাকে। কেননা হিংসা মানুষের সৎ আমল এমনভাবে খেয়ে ফেলে যেমন আগুন কাঠ খেয়ে ফেলে। (আবূ দাঊদ হা. ৪৯০৩, সহীহ)
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন : হিংসা হলো প্রথম পাপ, যা আসমানে করা হয় এবং প্রথম পাপ যা পৃথিবীতে করা হয়। যা আসমানে ইবলীস আদমের সাথে করেছিল। আর পৃথিবীতে কাবীল তার ছোট ভাই হাবীলের সাথে করেছিল। অতএব হিংসুক ব্যক্তি অভিশপ্ত, বহিস্কৃত ও প্রত্যাখ্যাত। (তাফসীর কুরতুবী)
তাই হিংসাকারীর অনিষ্ট থেকেও আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাঃ)-কে আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। হিংসা থেকে বাঁচার উপায় হল বেশি বেশি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় চাওয়া। এজন্য নিম্নোক্ত দু‘আটি বেশি বেশি পাঠ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِيْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَآ إِنَّكَ رَؤُوْفٌ رَّحِيْم)
“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং আমাদের সে-সব ভাইদের ক্ষমা কর যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে এবং মু’মিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।” (সূরা হাশর ৫৯ : ১০)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সূরা ফালাক ও নাসের অন্যান্য নাম জানলাম।২. এ দুটি সূরার গুরুত্ব ও ফযীলত জানলাম।
৩. জাদুটোনা ও তাবীজ-কবচ শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষেধ।
৪. কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ দ্বারা ঝাড়-ফুঁক হলে বৈধ, অন্যথায় তা অবৈধ।
৫. জাদুর প্রভাব রয়েছে যার প্রমাণ নাবী (সাঃ) স্বয়ং নিজে।
৬. ইয়াহূদীরা ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন চক্রান্ত ও অপকৌশল অবলম্বন করে আসছে যা আজও বিদ্যামান।
৭. হিংসা একটি বড় গুনাহ এবং মারাত্মক ব্যাধি যা মানুষের সৎ আমল বিনষ্ট করে দেয়।
সূরা নাস বাংলা অর্থসহ উচ্চারন, |